Plastic pollution

প্লাস্টিকের বিপদ

প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতারও। সরকার পথনির্দেশ করিতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৬:০০
Share:

লক্ষ্য ২০২২। তাহার মধ্যেই ভারতকে সিঙ্গল ইউজ়, অর্থাৎ এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক হইতে মুক্ত করিতে হইবে। সঙ্কল্পটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেই সঙ্কল্পকে বাস্তব রূপ দান করিতে একাধিক পরিকল্পনা গৃহীত হইয়াছে। উদ্বোধন করা হইয়াছে দুই মাসব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি: ‘ইন্ডিয়া প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ— হ্যাকাথন ২০২১’-এর। উদ্বোধনী বার্তায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানাইলেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। যে সকল সংস্থা ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করিতেছে, তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবারও নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ইহার ফলে প্লাস্টিকের উপযুক্ত বিকল্প খুঁজিবার পথটি সহজসাধ্য হইবে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নূতন পথও সন্ধান করা যাইবে।

Advertisement

উদ্দেশ্যটি মহৎ। কিন্তু কত দূর সফল ভাবে তাহা প্রয়োগ করা যাইবে, সন্দেহ সেই বিষয়ে। প্লাস্টিক দূষণ এবং পরিবেশের উপর তাহার ক্ষতিকর প্রভাব লইয়া নূতন করিয়া কিছু বলিবার নাই। তাহা বহুশ্রুত, বহুচর্চিত। ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ২৬০০০ টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হইয়া থাকে। তাহার মধ্যে প্রায় ১০০০০ টনই সংগৃহীত হয় না। ২০১৬ সালের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থা আইনের মাধ্যমে বলা হইয়াছিল, প্লাস্টিক বর্জ্য ভাগ করা, সংগ্রহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকিবে স্থানীয় প্রশাসনের উপর। ২০১৮ সালে ইহার সহিত যুক্ত হয় উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে উৎপাদকের দায়িত্বের বিষয়টিও। তৎসত্ত্বেও দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যায় নাই। অনেক সময় সংগৃহীত প্লাস্টিকের যে অংশটি ব্যবহারযোগ্য করিয়া তোলা সম্ভব, তাহা কারখানায় পাঠাইবার পর অবশিষ্টাংশ জ্বালাইয়া দিবার রেওয়াজ আছে। ইহার ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর ক্ষতি সাধিত হয়। সর্বোপরি, দোকান, বাজারে প্লাস্টিকের প্রথাগত ব্যবহারের সঙ্গেই যুক্ত হইয়াছে অনলাইন খাদ্য ও পণ্য পরিষেবায় প্লাস্টিকের বেহিসাবি ব্যবহার। ইহার জন্য যে নজরদারির প্রয়োজন ছিল, তাহাও কি যথাযথ হইয়াছে? বিলম্ব যথেষ্ট হইয়াছে। প্লাস্টিক দূষণ লইয়া এখনও সরকার উদ্যোগী না হইলে সম্মুখে ঘোর বিপদ।

এবং প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতারও। সরকার পথনির্দেশ করিতে পারে। সেই পথে চলিতে না চাহিলে শাস্তির ব্যবস্থাও করিতে পারে। কিন্তু নিজ বিপদ সম্পর্কে সচেতন হইবার দায়িত্বটি নাগরিকেরই। প্লাস্টিক জমিয়া নিকাশি বিপর্যস্ত হইলে সর্বাগ্রে অসুবিধায় পড়েন নাগরিক। দুর্ভাগ্য, সেই সচেতনতা নাগরিকদের একাংশের মধ্যে এখনও নাই। বাজার, দোকানে গিয়া তিনি প্লাস্টিক চাহিয়া লন। প্লাস্টিকের কাপ, স্ট্র ব্যবহারের পর যত্রতত্র ছুড়িয়া ফেলেন। এত দিনেও প্লাস্টিকের উপযুক্ত কোনও বিকল্প সরকার তাহার হাতে তুলিয়া দিতে পারিল না, এবং নাগরিকও প্লাস্টিকের যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে সচেতন হইলেন না। প্রশ্ন যেখানে জনস্বাস্থ্য এবং দূষণ, সেখানে দায়িত্ব কাহারও একার হইতে পারে না। পারস্পরিক দোষারোপ ভুলিয়া এই কথাটি সর্বাগ্রে আত্মস্থ করিতে হইবে এবং নিজ দায়িত্বটি পালন করিতে হইবে। অন্যথায় প্লাস্টিকমুক্ত ভারত গড়িবার স্বপ্নটি অধরাই থাকিয়া যাইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement