Wrestlers Protest

‘ছায়ার সাথে’ কুস্তি

ভারতের ক্ষমতাতন্ত্রে রাজনীতিই অন্যান্য ক্ষেত্রেরও নিয়ামক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসক দলের রাজনীতিবিদরাই জাতীয় শিল্প-বাণিজ্য, ক্রীড়া সংস্থারও নিয়ন্ত্রক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৬:০২
Share:

দিল্লির যন্তর মন্তরে লব্ধপ্রতিষ্ঠ কুস্তিগিররা প্রতিবাদ করছেন। ছবি: পিটিআই।

সমানে চলেছে সেই ‘ট্র্যাডিশন’— ক্ষমতাধরের অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের হাত গুটিয়ে থাকা, অযথা দেরি করা, অজুহাত দেওয়ার রীতি। দিল্লির যন্তর মন্তরে লব্ধপ্রতিষ্ঠ কুস্তিগিররা প্রতিবাদ করছেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের নিজের মর্জিমাফিক কুস্তি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে, তবে মারাত্মক অভিযোগটি মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা ও ভয় দেখানোর। এই যৌন হেনস্থা ও হুমকি দেওয়া চলছে গত দশ বছর ধরে, কখনও ব্রিজভূষণের বাংলোয়, এমনকি ভারতে ও বিদেশে কুস্তি প্রতিযোগিতা চলাকালীনও— দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন সাত মহিলা কুস্তিগির, তাঁদের অন্যতম এক নাবালিকাও! দিল্লি পুলিশ প্রথমে এফআইআর না নেওয়ায় অভিযোগকারীরা গিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে, প্রধান বিচারপতি বলেছেন অভিযোগগুলি ‘গুরুতর’। অবশেষে হয়েছে দু’টি এফআইআর, তার মধ্যে একটি ‘পকসো’ ধারা মেনে।

Advertisement

অভিযোগকারী আদালত পর্যন্ত না পৌঁছলে, বিচারকের নির্দেশটি কড়া তিরস্কার সমেত না এলে এই জমানায় কুটোটি নড়ে না, বার বার প্রমাণিত। ভারতের ক্ষমতাতন্ত্রে রাজনীতিই অন্যান্য ক্ষেত্রেরও নিয়ামক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসক দলের রাজনীতিবিদরাই জাতীয় শিল্প-বাণিজ্য, ক্রীড়া সংস্থারও নিয়ন্ত্রক। ব্রিজভূষণ উত্তরপ্রদেশের ছ’বারের সাংসদ, বিজেপির হয়ে নানা আসনে পাঁচ বার জয়ী। রাম জন্মভূমি আন্দোলন ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলা, দু’টিতেই তাঁর নাম জড়িয়ে। এই মানুষটিই জাতীয় কুস্তি সংস্থার তিন বারের প্রেসিডেন্ট, ভারতে কুস্তি ও কুস্তিগিরদের নিয়ে যে কোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁর কথাই শেষ কথা। জাতীয় সংস্থার প্রধান হিসাবে কুস্তিগিরদের অভিভাবক হয়ে ওঠার কথা যাঁর, তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা ও ভয় দেখানোর, এ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। মনে রাখতে হবে, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া ও বিনেশ ফোগটের মতো যাঁরা কুস্তিগিরদের প্রতিবাদকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা গত এক দশকে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কুস্তিতে বহু পদক ও খেতাব এনেছেন; অলিম্পিক্স, বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন রবি দাহিয়া, দীপক পুনিয়ার মতো প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় কুস্তিগিররা, সমর্থন এসেছে অভিনব বিন্দ্রা-সহ অন্য ক্ষেত্রের ক্রীড়াবিদদের থেকেও।

অথচ সমর্থন দূরস্থান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপের কথা শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী-সহ কারও কাছ থেকেই। বিশ্ব স্তরে পদক জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী যাঁদের ‘নিজের মেয়ে’ বলে বাড়ি ডেকে সম্মান জানিয়েছিলেন, তাঁরাই আজ দিল্লির রাস্তায় প্রতিবাদরত, এবং উপেক্ষিত। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থার প্রতিবাদ নতুন নয়, গত জানুয়ারিতে তাঁদের প্রতিবাদের জেরে সরকার কমিটি তৈরি করে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছিল, সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে এপ্রিলে। তাতেও কোনও ‘কাজ’ হয়নি, প্রভাবশালীর প্রভাব খর্ব হয়নি, এত কিছুর পরেও জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা হয়েছে ব্রিজভূষণের এলাকা গোন্ডা-তে। ক্ষমতার রাজনীতির ছায়াটি দীর্ঘ, তার সঙ্গে কুস্তি করতে গেলে গাত্রে যে ব্যথা হতে বাধ্য, আন্দোলনকারী কুস্তিগিররা বিলক্ষণ বুঝছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement