Car Accident

মূল্যহীন প্রাণ

শ্রমিকের কল্যাণ ও নিরাপত্তার মান নির্ধারণ করে সরকার। নজরদারি কড়া হলে নিয়োগকর্তারা তা অনুসরণ করেন, অন্যথায় এড়াতে চান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৮
Share:

উড়ালপুলে কাজ করার সময় বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা দেয় ওই মহিলা শ্রমিককে। প্রতীকী ছবি।

ফের দুর্ঘটনা উড়ালপুলে। এ বার বলি এক মহিলা শ্রমিক। উড়ালপুলে কাজ করার সময় বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা দেয় তাঁকে। এই মর্মান্তিক ও সম্পূর্ণ অকারণ মৃত্যুর পর কর্মীদের ঠিকাদার সংস্থার দাবি, মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা হলেও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এই প্রথম। এমনিতে উড়ালপুলে দুর্ঘটনা নতুন নয়। ঠিকা শ্রমিকদের ব্যস্ত সময়ে প্রায়শই প্রাণ হাতে করে সাফাই বা রঙের কাজ করতে দেখা যায়। প্রশ্ন হল, দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বলে উড়ালপুলের উপরে যেখানে পথচারীদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেখানে যানবাহন সম্পূর্ণ চালু থাকার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকদের কাজ করানো হয় কেন? সুরক্ষার ন্যূনতম উপকরণটুকুও ছাড়া?

Advertisement

শ্রমিকের কল্যাণ ও নিরাপত্তার মান নির্ধারণ করে সরকার। নজরদারি কড়া হলে নিয়োগকর্তারা তা অনুসরণ করেন, অন্যথায় এড়াতে চান। কিন্তু সরকার বা সরকারি দফতরই যখন শ্রমিকের নিরাপত্তা বিধি উপেক্ষা করে, তখন নাগরিক তা পালন করবে, সেই আশা ছলনামাত্র। এবং যে দেশে শ্রমিক, বিশেষ করে ঠিকা শ্রমিকের অভাব নেই, সেখানে প্রাণের ঝুঁকি না নিলে কাজও জোটে না। ফলে, কেউ মারা যান বহুতল থেকে পড়ে, কেউ বিদ্যুতের টাওয়ারে কাজ করতে গিয়ে, কেউ দেওয়াল চাপা পড়ে। আর, এত সহজে বিধি লঙ্ঘন সম্ভব হয় ‘শ্রমিক’ স্বীকৃতির অভাবে। ঠিকা শ্রমিকের নথিভুক্তির আইনটিও বারংবার উপেক্ষিত হয়। ফলে ঠিকাদারও শ্রম আইন লঙ্ঘনে পিছপা হন না। আর, ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা— অর্থহীন বাক্য হিসাবেই থেকে যায়। যেমন, এই দুর্ঘটনার পরে অভিযোগ উঠেছে, উজ্জ্বল রঙের পোশাকের মতো ন্যূনতম কোনও সুরক্ষা সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি ওই মহিলা শ্রমিককে। দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষারোপ পর্ব চলে কিছু দিন। কিন্তু শ্রমিক মৃত্যুর দায়ে ঠিকাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হল, এমনটা দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত হয় মৃতের পরিবার। এই চিত্র দেশের সর্বত্র। প্রসঙ্গত, শ্রম বিধি (২০২১) আইনের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলি ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য’ শিরোনামে উল্লেখ করা আছে। সেখানে চুক্তি শ্রমিকদের স্থায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য না থাকা এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত না হওয়ার কথাও উল্লিখিত রয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ পালিত হয় না। ফলে অস্থায়ী কর্মীরা শেষপর্যন্ত বঞ্চিতই থেকে যান।

শ্রমজীবী মানুষের দারিদ্র ও প্রাণের মূল্যে যে ব্যবস্থাটি চলছে, তা থামাবে কে? দায় বর্তায় প্রশাসনের উপরে। যে-হেতু অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কাজ ঠিকাদারদের সাহায্যে সম্পন্ন হয়, ফলে অভিযুক্ত ঠিকাদারকে চিহ্নিত করে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্বও নিতে হবে তাঁকেই। অন্য দিকে, আগামী দিনে যাতে শ্রম আইন লঙ্ঘিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। ঠিকা শ্রমিকরা যে কেবল ব্যবহারের জন্য নয়, তাঁদেরও যে জীবনের অধিকার আছে— আর ক’টা প্রাণের বিনিময়ে তা স্বীকার করবে সরকার?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement