Atmanirbhar Bharat

আত্মনির্ভর?

ভারত এখন যে অবস্থায় আছে, তেমন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রাণ বাঁচাইতে বিপুল টিকা আমদানির চেষ্টা করা ভিন্ন উপায়ান্তর নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৫:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

এক বৎসর পূর্বে তাঁহার ভাষণে কোভিড-যুদ্ধে জিতিতে ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের ডাক দিয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টিকা উদ্ভাবনের পর সেই ডাকের প্রাবল্য আরও বাড়িয়াছে— শাসকপক্ষের মেজো-সেজো নেতারাও হুঙ্কার দিয়া বলিয়াছেন, ভারতের বকলমে প্রধানমন্ত্রীই এখন ‘বিশ্বগুরু’। গোটা দুনিয়াকে টিকার জোগান দিয়া রক্ষা করিবে ভারত— নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর নেতৃত্বে উল্কাবেগে অগ্রসরমাণ ভারত। এবং, তাহার পর কী হইতে কী হইয়া গেল— কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে আছাড়িপিছাড়ি ভারত হইয়া উঠিল বিশ্ববাজারে কোভিড প্রতিষেধকের বৃহত্তম ক্রেতা। দুনিয়ার বহু দেশ যেখানে টিকাকরণ প্রকল্পের অন্তিম ধাপে পৌঁছাইয়া গিয়াছে, ভারত সেখানে দ্বারে দ্বারে টিকার সন্ধান করিয়া ফিরিতেছে।

Advertisement

যাঁহাদের প্রাণের সুর উগ্র জাতীয়তাবাদের তারে বাঁধা, ভারতের এই ‘পরাভব’-এ তাঁহারা ব্যথিত হইয়াছেন। যদিও অতি বিলম্বে— বস্তুত, এমনই বিলম্বে, যাহাকে দেশের নাগরিকের প্রতি অবিচার হিসাবেই গণ্য করা যাইতে পারে— বিশ্ববাজারে টিকার খোঁজে বাহির হইয়া কেন্দ্রীয় সরকার একটি অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করিল মাত্র। ভারত এখন যে অবস্থায় আছে, তেমন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রাণ বাঁচাইতে বিপুল টিকা আমদানির চেষ্টা করা ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। প্রশ্নটি জাতীয়তাবাদের নহে— কখনও ছিল না। প্রশ্নটি ছিল যত দ্রুত সম্ভব, সর্বাধিক সংখ্যক নাগরিকের প্রাণরক্ষা করিবার। তাহার জন্য প্রয়োজন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকার ব্যবস্থা করা। কোভিড-প্রতিরোধে আমেরিকা বা ইজ়রায়েলের ন্যায় দেশ শুরু হইতেই টিকার বিশ্ববাজারের দিকে চোখ রাখিয়া পরিকল্পনা করিয়াছিল, তাহার সুফল আজ পাইতেছে। অন্য দিকে, চিনের ন্যায় দেশ সর্বশক্তিতে চেষ্টা করিয়াছে, কী ভাবে যত বেশি সম্ভব টিকা উৎপাদন করা যায়। নরেন্দ্র মোদীর সরকার আত্মনির্ভরতার স্লোগানেই প্রথম তরঙ্গ রুখিয়া দেওয়া গিয়াছে মনে করিয়া আত্মতৃপ্তিস্রোতে ভাসিয়াছিল, এখন ভুগিতেছে।

জাতীয়তাবাদ দিয়া জনাবেগ সামলানো যায়, অতিমারি নহে। নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার দলের রাজনীতির মূল সমস্যা, ভুল প্রশ্নকে ভুল পরিপ্রেক্ষিতে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা। আত্মনির্ভর হইবার কথা দশমুখে বলা ও বাস্তবেও তাহা হইতে পারিবার মধ্যে বিস্তর তফাত— ভারত যদি নিজের প্রয়োজন মিটাইয়াও সত্যই বিশ্বব্যাপী টিকার জোগান দিতে পারিত, তাহা হইতে ভাল আর কিছুই হইত না। তাহা না পারিলে বিশ্ববাজার হইতে টিকার ব্যবস্থা করিয়া তাহা নাগরিকের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া জরুরি কর্তব্য বটে, কিন্তু তাহাতে সরকারের দোষক্ষালন হয় না। সত্যই ভারতের পক্ষে টিকায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব ছিল— যদি সরকার যথাসময়ে প্রাথমিক পাটিগণিতের হিসাবগুলি কষিত, তবেই। টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার আর্থিক অবস্থা এতখানি করুণ ছিল না যে, প্রয়োজনেও তাহারা উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করিয়া উঠিতে পারিত না। সরকার সেই চাপটুকুও দেয় নাই। আবার, টিকা কিনিবার নিশ্চয়তায়ও দেয় নাই, যাহাতে সংস্থাটি উৎপাদন বাড়াইবার সাহস পায়। রাষ্ট্রায়ত্ত উৎপাদক সংস্থাতেও যথেষ্ট লগ্নি করে নাই। ফল অনিবার্যই ছিল। দেশের নেতৃত্বের রাশ অযোগ্য হাতে থাকিলে তাহার পরিণতি কী হয়, অতিমারি প্রতি দিন তাহা দেখাইয়া দিতেছে। ভারত শিখিতেছে কি না, তাহাই প্রশ্ন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement