Calcutta High Court

পিছিয়ে বাংলা

সরকারের তরফে বিধিবদ্ধ ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারটি জরুরি বটেই, তারও বেশি জরুরি সার্বিক আইনশৃঙ্খলার রক্ষণ, মেয়েদের সুরক্ষা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১০
Share:

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য সরকারকে উদ্দেশ করে আদালতের আক্ষেপ বা ভর্ৎসনা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, বললে ভুল হবে কি? শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বিচারব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ ও ‘সুভাষিত’সমূহ যদি সরিয়েও রাখা যায়, সার্বিক ভাবে রাজ্য যে ভাবে যে পথে চলছে তা নিয়েও আদালতের অসন্তোষ ফুটে উঠেছে বার বার। সেই তালিকাতেই সাম্প্রতিক সংযোজন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির আক্ষেপ: উন্নতি ও শাসনব্যবস্থার প্রায় সব দিকেই পিছিয়ে আছে এই সময়ের পশ্চিমবঙ্গ— এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া নিয়ম পালনেও। পরিপ্রেক্ষিতটি অ্যাসিড-হামলার শিকার এক নাবালিকার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ এবং ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (নালসা)-র ঘোষিত প্রকল্প অনুযায়ী অ্যাসিড-আক্রান্ত মহিলাদের অন্তত সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, আক্রান্ত নাবালিকা হলে ক্ষতিপূরণের উপর আরও ৫০% অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের, এ ক্ষেত্রে সরকার তা দেয়নি। চার সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

Advertisement

বিষয়টি যে আসলে স্রেফ ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় সরকারের গাফিলতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এই সব ছাড়িয়ে এক বৃহত্তর সমস্যার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে, রাজ্য সরকার তা বুঝতে পারছে কি? অ্যাসিড-আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও নালসা-প্রকল্প অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিধি তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি— সরকারের তরফে এত কাল উপযুক্ত বিধি না-থাকাটা সেই বৃহত্তর সমস্যার একটি দিক। রাজ্য সরকার বলতে পারে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভিক্টিম কম্পেনসেশন’ প্রকল্পে তারা ২০১৬-২০২২ সময়কালে ১৩৯ জন অ্যাসিড-আক্রান্তকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু সংখ্যা ও অর্থমূল্যের থেকেও এখানে বড় প্রশ্নটি নিয়মবিধি তৈরি করে এবং মেনে, উপযুক্ত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণের। তা যে হয়নি, অন্তত যে মামলাটির সূত্রে হাই কোর্টের এই নির্দেশ সে ক্ষেত্রে হয়নি, তা পরিষ্কার। আজ হাই কোর্টে এই মামলা এসেছে বলে ব্যাপারটি জানা গেল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কত জন অ্যাসিড-আক্রান্ত মহিলা আদৌ নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান, লোকলজ্জা, অ্যাসিড-হামলার শারীরিক-মানসিক ‘ট্রমা’ পেরিয়ে আদালত অবধি পৌঁছতে, তদুপরি প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের যাথার্থ্য নিয়ে মামলা করতে বা চালিয়ে যেতে সক্ষম?

সরকারের তরফে বিধিবদ্ধ ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারটি জরুরি বটেই, তারও বেশি জরুরি সার্বিক আইনশৃঙ্খলার রক্ষণ, মেয়েদের সুরক্ষা। অ্যাসিড-হামলা হল আর আক্রান্তের হাতে ক্ষতিপূরণও ধরিয়ে দেওয়া হল, সরকারের পক্ষে এ কোনও গর্বের কথা নয়। রাজ্যে যখন মেয়েদের উপর একটিও অ্যাসিড-হামলা হবে না, কিংবা প্রতিটি হামলায় অপরাধীর সত্বর ও উপযুক্ত দণ্ডবিধান হবে, সেই পরিস্থিতিটিই হবে আসল গর্বের। গোখলের বিখ্যাত উক্তিটি উদ্ধৃত করে কলকাতা হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন শিক্ষাদীক্ষা, সমাজ-আচরণ, সংস্কৃতি-সহ সর্বক্ষেত্রে বাংলার ‘একদা’ এগিয়ে থাকার কথা, বেগম রোকেয়া সরোজিনী নায়ডু প্রমুখ মহীয়সীদের কথা, বাংলার উজ্জ্বল ‘নারীবাদ’-এর প্রসঙ্গ। রাজ্য সরকার সেই অতীতগৌরব বহতা রাখতে কী পদক্ষেপ করছে, সেই আত্মপ্রশ্নটি করা দরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement