ছবি: রয়টার্স।
ভয়ঙ্কর আর্থিক প্রতিকূলতা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে সম্প্রতি অশান্তির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর-এর আঞ্চলিক রাজধানী মুজ়াফ্ফরাবাদ। জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি-র (জেএএসি) নেতৃত্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্যের প্রতিবাদে পথে নামার পরিকল্পনা ছিল আন্দোলনকারীদের। বহু দিন ধরেই দানা বাঁধছিল এ-হেন অসন্তোষ। কিন্তু তার আগেই দলের বহু নেতা গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে একাধিক মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর মেলে। সবচেয়ে বেশি অশান্তি ছড়ায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট বাল্টিস্তানে। তবে স্থানীয় প্রশাসন পরে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত আন্দোলন তুলে নেয় জেএএসি। অন্য দিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি আট কোটি ত্রিশ লক্ষ ডলারের ভর্তুকির কথাও ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। তবে জন-অসন্তোষ পুরোপুরি প্রশমিত হয়েছে কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এ-হেন অশান্তির ঘটনা নতুন নয়। গত বছর অগস্টেও চড়া বিদ্যুৎ বিলের জেরে অনুরূপ আন্দোলনে নামেন জনসাধারণ। আঞ্চলিক নেতারা বহু কাল ধরেই নানা ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে আসছেন। অন্যতম অভিযোগ, নিলম-ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ তাদের পাওয়া উচিত, তা তারা পায়নি। এমনিতেই ২০১৯ সালের পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার পরে ভারত সরকার পাকিস্তানি পণ্যের উপরে শুল্ক বহু গুণ বৃদ্ধি করার ফলে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন সেই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি আরও কঠিন হয় যখন ওই বছরই ভারত জম্মু এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করার পরে সমস্ত ব্যবসায়িক আদানপ্রদান বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সঙ্কুচিত হওয়ায় আহত হয় পাক অর্থনীতিই। তা ছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাম্প্রতিক কালে এ-হেন আঞ্চলিক অস্থিরতা আরও অস্বস্তি বাড়িয়েছে ইসলামাবাদের।
বলা বাহুল্য, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর বিবাদের মূলে থাকা এই অঞ্চলের কূটনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। লক্ষণীয়, কাশ্মীরের অধিকারগুলির মুখ্য প্রবক্তা হিসেবেই বিশ্বের কাছে এত কাল নিজেদের জাহির করে এসেছে পাকিস্তান। সেখানে তথাকথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সুরও চড়াতে দেখা গিয়েছে তাদের। কিন্তু সাম্প্রতিক সঙ্কট এক দিকে পাকিস্তান সরকারের পরিচালন দক্ষতার অপারগতা এবং অন্য দিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তাদের বহু কালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবহেলা, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে বিশ্বসমক্ষে বেআব্রু করেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নতুন উত্তেজনায় যেমন অস্বস্তি বেড়েছে পাকিস্তান সরকারের, তেমনই তীব্র হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের গলায় ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতেরই অংশ’-এর দাবি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে পাকিস্তান সরকার হয়তো ক্রমশ আরও বড় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে, সীমান্তপারেও।