— ফাইল চিত্র।
খুব বেশি দিন লাগার কথা ছিল না রাশিয়ার ইউক্রেন অধিগ্রহণে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বাস ছিল, তাঁর বিশেষ সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা
বাস্তবায়িত হতে হয়তো কয়েকটা দিনই যথেষ্ট, সপ্তাহ তো দূর অস্ত্। সব হবে মসৃণ ভাবে। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ক্রাইমিয়া আগ্রাসনের সময়ে, ২০১৪ সালে। তাঁর আশা ছিল, রুশ সেনারা দখল করবে ইউক্রেনের অনেকাংশই এবং পরবর্তী কালে কিভ-এ স্থাপিত হবে তাঁদেরই পুতুল সরকার। অতঃপর দু’বছর অতিক্রান্ত। দু’তরফেই লক্ষ লক্ষ সেনার প্রাণ গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ভিটেছাড়া— কেউ পালিয়েছেন দেশের অন্যত্র, কেউ উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিদেশে। সমীক্ষা বলছে, ইউক্রেনকে পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠন করতে খরচ পড়বে প্রায় ৪৮৬ কোটি ডলারেরও বেশি। এ দিকে যুদ্ধক্ষেত্রেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন কিভ। ক্রমশ টান পড়ছে তার লোকবল এবং অস্ত্রশস্ত্রে। গত অক্টোবরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিভ-কে অর্থসাহায্যের প্রস্তাব সেনেটে রিপাবলিকানদের নাকচের জেরে আটকে পড়ায় চিন্তা বেড়েছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসন্ন নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় এলে যে ইউক্রেনের সমস্যা বাড়বে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ইতিমধ্যেই সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাও কিভ-এর অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতি পূরণে অক্ষম, কারণ তারা সামরিক উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেনি। অন্য দিকে, ইউক্রেন সরকার সেনায় যোগ দেওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা এখনও ২৭ বছরে সীমাবদ্ধ রাখায়, পর্যাপ্ত লোক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। পশ্চিমের সামরিক সাহায্যে গত বছর ইউক্রেন যে ভাবে পালাবদলের আশা করেছিল, তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। বরং সম্প্রতি পূর্ব দানেৎস্ক অঞ্চলের আভদিভকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে তারা, যা মনোবল বাড়িয়েছে রুশ শিবিরে।
আর পুতিন? বর্তমানে পরিস্থিতি যেন তাঁরই অনুকূলে। তাঁর সমালোচক এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রধান মুখ অ্যালেক্সেই নাভালনি-র আকস্মিক মৃত্যুতে নিজের দেশে এমনিতেই তিনি আজ অপ্রতিরোধ্য। এর মাঝে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিও কিছুটা রুশমুখী। আমেরিকা-সহ পশ্চিমের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রুশ-অর্থনীতিতে আঘাত হানতে পারেনি। উল্টে অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের জেরে আজ রাজকোষ উদ্বৃত্ত, যা খরচ জোগাচ্ছে যুদ্ধের। সৈন্যবল এবং সামরিক উৎপাদন, দু’তরফেই এগিয়ে। এখন পুতিনের পরিকল্পনা সহজ— এক দিকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আর অন্য দিকে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা— নিজেদের আর্থিক টালমাটালের মাঝে আর কত দিন ইউক্রেনকে টানতে পারে পশ্চিমি দেশগুলি।
তবে অচিরে রাশিয়া যুদ্ধে জয়লাভ করবে, এ সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রসঙ্গত, এই সংঘাত ইউরোপীয় দেশগুলির নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গিকে মৌলিক ভাবে বদলে দিয়েছে। বুঝে গিয়েছে আগের মতো আমেরিকার উপরে ভরসা রাখা যাবে না। ফিনল্যান্ড ইতিমধ্যেই নেটো সদস্যপদ গ্রহণ করেছে। সুইডেনও সেই পথে। অন্যান্য দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এ দিকে, শত অসুবিধা সত্ত্বেও ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জি৭ সদস্যভুক্ত দেশগুলি। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই কিভ-র কাছেও। সব মিলিয়ে যুদ্ধ আপাতত চলছে, চলবে।