Global Warming

সংশয় এখনও

সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলি এই প্রথম জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শূন্যে নামিয়ে আনতে এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অস্তাচলে ২০২৩। জলবায়ুগত দিক থেকে এ বড় সুখের সময় নয়। ইতিমধ্যেই উষ্ণতম বছরের শিরোপা পেয়েছে ২০২৩। একাধিক মাস তাপমাত্রার নিরিখে নতুন রেকর্ড গড়েছে। উষ্ণায়ন রুখতে যা যা করা উচিত, বিশ্ব যে এখনও অবধি সেই কাজে যথেষ্ট তৎপর নয়, তেমন একাধিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রাটি যে ক্রমেই হাতছাড়া হতে বসেছে, সেই লক্ষণও স্পষ্ট। ফলে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা এই বার শুরু হবে কি না, তেমন এক ক্ষীণ প্রত্যাশা ছিল সিওপি২৮-এর দুবাই সম্মেলনকে ঘিরে। ক্ষীণ, কারণ প্রতি বছরই ঢের আশা জাগিয়ে শুরু করেও মোক্ষম প্রশ্নগুলি শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে যেতে অভ্যস্ত এই সম্মেলন। বাস্তবেও, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা সম্মেলন এ বারও শেষ হল অনেকগুলি সংশয় জাগিয়ে রেখে।

Advertisement

যেমন, সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলি এই প্রথম জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শূন্যে নামিয়ে আনতে এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধানতম কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি— এটা প্রমাণিত হওয়ার পরেও যে সিওপি-র জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় জীবাশ্ম জ্বালানি বর্জনের আহ্বান জানাতে ত্রিশটি অমূল্য বছর কেটে গেল, তা আশ্চর্য বইকি। তা ছাড়া যে নরম ভাষায় এই রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তেল এবং গ্যাস কোম্পানিগুলি যে উৎপাদন কমাবে, এমন সুযোগ কম। সমস্যা আরও আছে। সিওপি২৮-এ অন্য যে জরুরি পদক্ষেপ বিষয়ে সহমত হয়েছে যোগদানকারী দেশগুলি, সেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতাকে তিন গুণ এবং শক্তি কুশলতার হারকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারা— বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। কিন্তু এ কাজে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্যের দরকার, যাতে পরিকাঠামোগত রূপান্তরের কাজটি সহজ হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সম্মেলনে এই সাহায্য বিষয়ে স্পষ্ট দিশা মেলেনি।

অবশ্য অর্থসাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির এমন অনিচ্ছুক মনোভাবের প্রমাণ ইতিপূর্বেও বিলক্ষণ দেখা গিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ‘ক্লাইমেট ফাইনান্স’ গঠনের প্রতিজ্ঞা পূরণে তারা ব্যর্থ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব উন্নত এবং উন্নয়নশীল— সমস্ত দেশেই অনুভূত। কিন্তু তার মোকাবিলা এবং কাটিয়ে ওঠার পথটি উভয় ক্ষেত্রে এক নয় অর্থনৈতিক কারণেই। এবং যে-হেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির দায় ঐতিহাসিক ভাবেই অন্যদের থেকে ঢের বেশি, তাই উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উষ্ণায়নজনিত ক্ষতিপূরণ এবং বিরূপ প্রকৃতির মোকাবিলার পরিকাঠামো নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দানের প্রসঙ্গটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের শর্ম এল শেখ-এর জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বছর তা অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু সেই সাহায্য দানও বাধ্যতামূলক নয়। তাই এ-যাবৎ কাল ঐতিহাসিক দায় স্বীকারেই অসম্মত গ্লোবাল নর্থ কত আন্তরিক ভাবে এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করবে, সংশয় থাকছেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement