Sandeshkhali Incident

দুষ্টের পালন

রাজ্য সরকার ও শাসক দলের বিভিন্ন যুক্তি থেকে সূত্র গ্রহণ করে কেউ বলতেই পারেন, সিবিআই বা ইডি-র তদন্ত আসলে ঘুরপথে রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৮:২৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত আটকাতে রাজ্য সরকার মামলা করছে কেন? সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি বি আর গাভাই ও সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের এই প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর রাজ্য সরকারের কাছে আছে বলে মনে হয় না। শেখ শাহজাহানের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, সরকার বা প্রশাসনের কাছে তাঁর একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত এক জন অভিযুক্ত হিসাবে। সাধারণ অভিযোগ নয়, সন্দেশখালিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগের পাহাড় জমেছে, তা চরিত্রে মারাত্মক। সুতরাং, শাসক দলের স্বার্থ যা-ই হোক না কেন, সরকারের কাছে তাঁকে তদন্ত থেকে রক্ষা করতে চাওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ থাকতে পারে না। দুর্জনে বলবে, শেখ শাহজাহান নিমিত্তমাত্র— রাজ্যের শাসকরা তদন্ত আটকাতে মরিয়া, কারণ সেই প্যান্ডোরার বাক্স থেকে যা বেরোবে, তা শাসকদের আরও বেআব্রু করে দেবে। সত্যি যদি তা-ই হয়, তাতেও রাজ্য প্রশাসনের কর্তব্য পাল্টায় না। দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকলে জড়িয়েছে দল— একটি রাজনৈতিক সত্তা— সেই দায় প্রশাসনের উপরে বর্তায় না। শেখ শাহজাহান, বা তাঁর সূত্রে শাসক দলের অন্য ছোট-বড় নেতাদের রক্ষা করতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলাই বা দাখিল করবে কেন, রাজকোষের টাকা খরচ করে বহুমূল্য আইনজীবীই বা নিয়োগ করবে কেন? এতে শাসক দলের মরিয়া ভাবটি প্রকট— যে কোনও মূল্যে প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতেই হবে। কিন্তু, রাজ্য প্রশাসন সেই তাগিদের শরিক হবে কেন, সেই উত্তর দেওয়ার দায় অনস্বীকার্য।

Advertisement

রাজ্য সরকার ও শাসক দলের বিভিন্ন যুক্তি থেকে সূত্র গ্রহণ করে কেউ বলতেই পারেন, সিবিআই বা ইডি-র তদন্ত আসলে ঘুরপথে রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপ। এবং, সেই হস্তক্ষেপের কারণটিও প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক— কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি আসলে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার আয়ুধমাত্র। অস্বীকার করা চলে না যে, গত দশ বছরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির এ-হেন ব্যবহার প্রবল হারে বেড়েছে; বিরোধী রাজনৈতিক দলশাসিত রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার দাপট প্রবলতর হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বটি রাজ্য সরকারের। কোনও গূঢ়তর উদ্দেশ্যে সেই কাজে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা হলে রাজ্য সরকার আইনি পথে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কারণ নেই। অর্থাৎ, শাসক দলও শেখ শাহজাহানকে নিমিত্ত হিসাবেই দেখছে— তাদের মতে, শাহজাহানকে ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার আসলে রাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রীয় অধিকার লঙ্ঘন করতে চাইছে। অতএব, প্রতিরোধ স্বাভাবিক।

এই যুক্তিটি মেনে নেওয়া যেত, যদি দেখা যেত যে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ঠেকাতে রাজ্য সরকার যতখানি আগ্রহী, শেখ শাহজাহানের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে বা তাঁদের দমন করতেও প্রশাসন অন্তত ততখানিই উদ্যোগী। সে কথা বলার কোনও উপায় রাজ্য প্রশাসন রাখেনি। কেন্দ্রীয় সংস্থা হানা দেওয়ার আগে অবধি শাহজাহানের দাপট কমানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগকে পাত্তাই দেওয়া হয়নি। এমনকি, কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের হেনস্থা করার পরও পুলিশ সমানেই শাহজাহানকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু শাহজাহানের ক্ষেত্রেই নয়, অভিযুক্তকে রক্ষা করার এই অভ্যাসটি এখন গোটা রাজ্যে সমান ভাবে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ, এ রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের মূল ভূমিকাটিই পাল্টে গিয়েছে— দুষ্টের দমনের পরিবর্তে তারা এখন দুষ্টের পালনে ব্যস্ত। পশ্চিমবঙ্গের দূষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের চরিত্র বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই অবস্থায় কি আর যুক্তরাষ্ট্রীয় অধিকারের দোহাই দেওয়া চলে? সে যোগ্যতা কি আর রাজ্য প্রশাসনের অবশিষ্ট রয়েছে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement