Most Polluted Cities

সকলই শোভন

কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় বাস্তবের নির্ভুল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, এমনটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম রাগ করেছেন। রাগের কারণ: কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’ সমীক্ষার (২০২৩) সাম্প্রতিক রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে কলকাতা-সহ এই রাজ্যের শহরগুলির যে ছবি আঁকা হয়েছে তা আক্ষরিক অর্থেই কুৎসিত। পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে সারা দেশের লক্ষাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট ৪৪৬টি শহরের তালিকায় শেষ দশটির মধ্যে দশটি শহরই এই রাজ্যে। দেশের সবচেয়ে নোংরা শহরের স্বীকৃতি অর্জন করেছে হাওড়া। রাজধানী কলকাতার স্থান ঈষৎ উন্নততর— পিছন দিক থেকে নবম। বড় শহরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ছোট শহরও। এক লক্ষের কম জনবহুল ৩৯৭০টি শহরের তালিকাতেও পশ্চিমবঙ্গের একই হাল। এবং পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গার তীরবর্তী ৮৮টি জনপদের মধ্যেও রাজ্যের অবস্থা তথৈবচ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বক্তব্য, ৪৬টি মাপকাঠি ব্যবহার করে এবং শহরের পুরসভার পাঠানো রিপোর্ট অনুসারেই প্রস্তুত এই রিপোর্ট। ফিরহাদ হাকিমের ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া: রাজ্যের বদনাম করার উদ্দেশ্যেই এই তালিকা বানানো হয়েছে। কেন্দ্র রাজ্য তরজার আরও একটি পালা বুঝি শুরু হল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় বাস্তবের নির্ভুল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, এমনটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার ক্ষুদ্র ও অনৈতিক কুমন্ত্রণায় ভুল ছবি আঁকা হতে পারে, আবার তেমন কোনও উদ্দেশ্য না থাকলেও পদ্ধতিগত ত্রুটি বা সমীক্ষকদের ভুলভ্রান্তির কারণেও বাস্তবের সঙ্গে রিপোর্টের ব্যবধান থাকতে পারে। কিন্তু একটি সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করতে হলে তথ্য এবং যুক্তি দিয়েই তা করা যায়। মেয়র মহোদয় তার কোনও চেষ্টাই করেননি, তিনি এক দিকে অন্য রাজ্যের শহরগুলির অপরিচ্ছন্নতার তুলনা টেনেছেন, অন্য দিকে বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরী কলকাতার কত প্রশংসা করে থাকেন সে-কথা উল্লেখ করেছেন। এমন ‘যুক্তি’ নিতান্তই করুণ এবং হাস্যকর ছেলেমানুষির পরিচয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এই সওয়ালের পিছনে একটি মানসিকতার দীর্ঘ ছায়া আছে, যা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, বিপজ্জনক।

সেই মানসিকতা, এক কথায়, দেখনদারির। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকদের জমানায় শহরগুলির, বিশেষত কলকাতার কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু, ইমারত, পার্ক, নদীতীর ইত্যাদির সংস্কার হয়েছে, সেগুলি দেখতে আগেকার তুলনায় শোভন হয়েছে, সে কথা অনস্বীকার্য। বিদেশি বা অন্য রাজ্যের পর্যটকরা, এমনকি শহরের বাসিন্দারাও সেই রূপ দেখে প্রীত হয়ে থাকেন। এই উন্নতির জন্য রাজ্য তথা শহরের পরিচালকদের অবশ্যই প্রশংসা প্রাপ্য। কিন্তু এই প্রসাধনী সংস্কারকেই কি তাঁরা পরিচ্ছন্ন শহরের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন? তাঁরা কি জানেন না যে, একটি বাড়ির বাইরের দেওয়াল বা প্রাঙ্গণটুকু সুদৃশ্য থাকলেই সেই বাড়ির পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠিত হয় না? পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলির সামগ্রিক ছবিতে সেই দাবি পূরণের চিহ্নমাত্র দেখা যায় না, বরং তাদের সর্বাঙ্গ জুড়ে প্রতিনিয়ত এক মলিন অযত্ন এবং দৈন্যের অজস্র ক্ষতচিহ্ন প্রকট হয়ে থাকে। অন্য শহরের কথা ছেড়ে দেওয়া যাক, রাজ্য রাজধানীর অধিকাংশ এলাকাতেই যত্রতত্র জঞ্জালের স্তূপ, রাস্তার সর্বত্র রকমারি বর্জ্য পদার্থের ছড়াছড়ি, ফুটপাত বলে কিছু নেই, যদি থাকে তা-ও রকমারি কঠিন এবং তরল আবর্জনার তাড়নায় হাঁটার অযোগ্য। সুদৃশ্য বহুতল বিপণির বাইরে পা রাখলেই একটি নোংরা শহর চতুর্দিক থেকে মুখব্যাদান করে— এমন অভিজ্ঞতা কলকাতায় অতিসুলভ। বস্তুত, শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাস এই রাজ্যে অনেককালই অন্তর্হিত হয়েছে, বর্তমান শাসকরা সেই অনভ্যাসকেই মজ্জাগত করে নিয়েছেন, কিছু নির্বাচিত পরিসরকে নিত্য প্রসাধনে সুদৃশ্য রেখে বাকি শহরকে যথেচ্ছাচারের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। কেবল রাগ দেখিয়ে এই অপ্রিয় এবং কুদর্শন সত্যকে আড়াল করা যায় না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement