Public Awareness

নিঃশব্দ ঘাতক

অতি সংক্রামক কোভিডের সঙ্গে বিগত তিন বছর ধরে লড়াই করছে বিশ্ব। সে লড়াইয়ের চরিত্র জানা, প্রতিরোধের উপায়গুলিও বহু আলোচিত। অথচ,শরীরে প্রাণঘাতী অসংক্রামক অসুখগুলি দানা বাঁধছে অজানতেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৭
Share:

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, স্থূলতার মতো ‘নিঃশব্দ ঘাতক’-এর হাত থেকে মুক্তি মিলছে না গ্রামাঞ্চলের। প্রতীকী ছবি।

সুরক্ষিত নয় গ্রামজীবনও। তুলনামূলক ভাবে কম দূষিত পরিবেশে বাস করে এবং টাটকা আনাজপাতি খাদ্যতালিকায় রাখা সত্ত্বেও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, স্থূলতার মতো ‘নিঃশব্দ ঘাতক’-এর হাত থেকে মুক্তি মিলছে না গ্রামাঞ্চলের। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অস্বাস্থ্যকর মেটাবলিক অবস্থা এবং মদ্যপান না করা সত্ত্বেও লিভারে মেদ জমে যাওয়ার মতো সমস্যাও। অথচ, প্রায়ই সচেতনতার অভাবে এগুলি অনির্ণীত থেকে গিয়ে বিপদ ডেকে আনে। সেই সূত্রেই সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল লিভার ফাউন্ডেশন-এর এক গবেষণায় গ্রামবাংলায় কত সহজ উপায়ে মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার, এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার চিহ্নিত করা যায়, সেই বিষয়টি উঠে এসেছে। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে, এই চিহ্নিতকরণের কাজে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের কতটা সুসংহত ভাবে ব্যবহার করা যায়। জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশের পরিবর্তিত যাপন পদ্ধতির সাপেক্ষে গবেষণাটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

অতি সংক্রামক কোভিডের সঙ্গে বিগত তিন বছর ধরে লড়াই করছে বিশ্ব। সে লড়াইয়ের চরিত্র জানা, প্রতিরোধের উপায়গুলিও বহু আলোচিত। অথচ, শরীরে প্রাণঘাতী অ-সংক্রামক অসুখগুলি দানা বাঁধছে অজানতেই। অ-সংক্রামক রোগ যে-হেতু এক থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে না, তাই আপাতদৃষ্টিতে তাকে কম ভয়ঙ্কর মনে হয়। বাস্তব যদিও তেমনটা নয়। বরং, এই রোগে আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আগামী দিনে দেশ, তথা বিশ্ব জুড়ে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে তীব্র সঙ্কট তৈরি করবে বলেই আশঙ্কা। অথচ, বর্তমানে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যা অবস্থা, তাতে সর্বস্তরে এই ধরনের রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রোগীর উপর নিয়মিত নজরদারির কাজটি সহজ নয়। এর জন্য মূলত দায়ী স্বাস্থ্যখাতে অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দ। যেখানে মোট বাজেট বরাদ্দের অন্তত ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার কথা, সেখানে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ৩ শতাংশের অধিক হয় না। ফলে, অতি সংক্রামক এবং জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়কারী হিসাবে চিহ্নিত রোগগুলিতেই শুধুমাত্র মনোযোগ এবং সর্বশক্তি নিয়োজিত হয়।

কিন্তু এই প্রবণতা বিপজ্জনক। কয়েক মাস পূর্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছিল যে, প্রতি দু’সেকেন্ডে বিশ্বে এক জন সত্তরের কম বয়সি মানুষ মারা যান অ-সংক্রামক ব্যাধির কারণে। এবং এই মৃত্যুর ৮৬ শতাংশই ঘটেছে নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলিতে। ২০১৯ সালে ভারতে ৬৬ শতাংশ মৃত্যুর কারণই ছিল অ-সংক্রামক ব্যাধি। সুতরাং, গোড়াতেই এ-হেন সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করার পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ, বহু ক্ষেত্রে দেরি করে রোগ ধরা পড়ায়, চিকিৎসার ব্যয় অত্যধিক হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, জনসংখ্যার বড় অংশ এমত রোগে আক্রান্ত হলে কর্মক্ষেত্রের উপরে চাপ পড়ে। দেশের অর্থনীতির পক্ষে তা ভাল ইঙ্গিত নয়। একই সঙ্গে ক্যাম্প করে, প্রচার চালিয়ে জনগণের মধ্যে এই রোগগুলির বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটিও করা প্রয়োজন। রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষাগুলি যাতে সুলভে এবং সহজে নিম্নবিত্তরা করাতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করতে হবে। কোভিড, ডেঙ্গি, যক্ষ্মা, পোলিয়োর মতো রোগের সঙ্গে লড়াই জারি থাকবে। কিন্তু অন্য মারণব্যাধিগুলি যেন দৃষ্টির আড়ালে চলে না যায়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে বইকি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement