Poor Condition Of Roads

প্রদীপের নীচে

অপরিষ্কৃত, অসমান রাস্তা, বেহাল যানব্যবস্থা কোনও সভ্য শহরের লক্ষণ হতে পারে না। অথচ, কলকাতায় এই সব ক’টি লক্ষণই বর্তমান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৩৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শারদোৎসবের পুণ্যলগ্নে কলকাতা তিলোত্তমা হয়ে ওঠে। কিন্তু মহানগরের রাজপথ সেই তিলোত্তমা রূপের স্পর্শ পায় কি? পথঘাটের বাইরের চাকচিক্যখানি লক্ষণীয় বৃদ্ধি পায়, সন্দেহ নেই। মাসখানেক আগে থেকে নীল-সাদা রঙের পোঁচ পড়ে পথ-বিভাজিকায়, পথপার্শ্বের পুরনো আধভাঙা আলোগুলি সরে গিয়ে নতুন আলোকমালায় সাজে শহর। কিন্তু এ নিতান্তই বাইরের সাজ। অন্দরের জীর্ণ, কঙ্কালসার চেহারাখানি তার অবিকৃত থাকে। উৎসব উপলক্ষে তাতে প্রসাধনীর আস্তরণ পড়ে মাত্র। ঠিক একই ভাবে বছর বছর পুজো এলেও শহরের যান নিয়ন্ত্রণের বেহাল ছবিটির তিলমাত্র পরিবর্তন ঘটে না। পুজোর ক’দিন তো বটেই, পুজোর দু’মাস আগে থেকেই রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেল আর কেনাকাটার চাপে যে প্রবল যানযন্ত্রণা শুরু হয় শহরে, তা মিটতে উৎসবের লগ্ন পেরিয়ে যায়। শরতের সোনা রোদ, রাতে কৃত্রিম আলোকমালার ঝর্নাও এই অন্ধকারটিকে মুছে দিতে পারে না।

Advertisement

এই বাংলায় দুর্গোৎসব আসে ভরা বর্ষার পথ পেরিয়ে। ফলে, একটানা বৃষ্টিতে দুর্বল রাস্তা আরও দুর্বল হয়, যত্রতত্র জল জমে গলি-তস্য গলিতে খানাখন্দ স্পষ্টতর হয়। রাস্তা কবে সারবে তার উত্তরে পুরকর্তারা হামেশাই জানান যে, পুজোর আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সবিনয়ে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ বছরভরের দায়িত্ব। পুজোর আগমনে তাতে কিছু বাড়তি যত্ন যুক্ত হতে পারে। কিন্তু মূল কাজটি পুজোর অপেক্ষায় ফেলে রাখা চলে না। অথচ, যে তৎপরতায় পুজোর ঠিক মুখে সমস্ত রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ করা হয়, বছরভর তার দেখাই মেলে না। ফলে এই জোড়াতালির বন্দোবস্তও পুজোর মতোই ক্ষণস্থায়ী হয়। রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ আছে, দায়িত্বপ্রাপ্তরাও আছেন। ভরা বর্ষায় রাস্তার যথেষ্ট ক্ষতি হয় ঠিকই, কিন্তু রাস্তা নির্মাণ এবং তার মেরামতের কাজটি অত্যাধুনিক উপায়ে সুসম্পন্ন হলে এত সহজে রাস্তা ভাঙতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। অবশ্য সুস্থায়ী, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নির্মিত রাস্তা ঘন ঘন সারানোর প্রয়োজনকে হ্রাস করে, যা শেষ পর্যন্ত নেতাদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর লক্ষ্মীলাভের বন্দোবস্তে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। প্রশ্ন তোলা যায়, সেই ভয়েই কি রাস্তার এ-হেন জরাজীর্ণ অবস্থা দেখেও পুর-প্রশাসন নির্বিকার থাকে? ঠিক যেমন ভাবে নির্বিকার থাকে, ছোট-বড় পুজোয় রাস্তা খুঁড়ে প্যান্ডেল বাঁধার পর খুঁটির গর্ত ওই অবস্থাতেই থেকে যাওয়ার পরও। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক, দুর্গোৎসবের মাসেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গির তাণ্ডব অব্যাহত থাকে। খুঁটির গর্তে জল জমে তা ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাটিও তাই অস্বীকার করা যায় না। অথচ, ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত প্রসঙ্গে পুরকর্তারা অধিকাংশ সময়ই নাগরিক অসচেতনতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বাড়ির চৌবাচ্চা, ফুলদানির পাশাপাশি রাস্তায় জমা জলের বিপদের প্রতিও তাঁরা সমান সচেতন হলে হয়তো ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব রোখা সহজ হত।

অপরিষ্কৃত, অসমান রাস্তা, বেহাল যানব্যবস্থা কোনও সভ্য শহরের লক্ষণ হতে পারে না। অথচ, কলকাতায় এই সব ক’টি লক্ষণই বর্তমান। ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে রাস্তার পাশের ফুটপাতগুলিও। কিছু দিন অন্তরই সেগুলিকে সারানো হয়, নতুন টালি বসে, এবং অনতিবিলম্বেই সেই টালি ভেঙে, নড়বড়ে হয়ে তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। যে কোনও সময় পথচারীর আহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীকে নামতে হয় রাস্তায়। গাড়ির ভারে ইতিমধ্যেই ন্যুব্জ রাস্তা আক্রান্ত হয় যানজটে। এই অশুভ চক্রের শেষ নেই। রাস্তার বেহাল অবস্থা জনজীবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বয়ে আনে। নাগরিক স্বার্থ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জনপ্রতিনিধিদের এই সাধারণ কথাটি বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে হয় কেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement