KMC

নড়বড়ে

রাজনীতিই এমন প্রভাবশালীদের তৈরি করে। তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবৈধ নির্মাণকে ‘সামাজিক ব্যাধি’ বলে অভিহিত করলেও, ব্যাধির শিকড় যে দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিতে, সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ০৮:১০
Share:

—ফাইল চিত্র।

গত দেড় মাসে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি অবৈধ নির্মাণের নোটিস জারি করেছে কলকাতা পুরসভা। এই সংবাদ কলকাতা তথা রাজ্যের বাসিন্দাদের স্বস্তি আর উদ্বেগের দোলাচলে ফেলে দেয়। দুর্বল ভিত্তিতে তৈরি বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে পুরসভা যে সক্রিয় হয়েছে, তা আশ্বস্ত করে। কিন্তু অবৈধ নির্মাণের যে বহর সামনে আসছে, তাতে দুশ্চিন্তার উদ্রেক হতে বাধ্য। নোটিসপ্রাপ্ত বাড়ির অধিকাংশই পাঁচ-দশ বছরের পুরনো। এত বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে, বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পুলিশ-প্রশাসনের যে লোকবল ও সময় দরকার, তা জোগানো যাবে কী করে? বর্তমানে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ রয়েছে, কারণ নির্বাচন চলাকালীন পুলিশ বাড়ি ভাঙার কাজে সহায়তা করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচনের পরেও কি সে কাজ সহজ হবে? পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা যদি এমন তৎপরতা বজায় রেখে বেআইনি বাড়ির নির্মাতাদের নোটিস পাঠাতে থাকেন, তা হলে কেবল বাড়ি ভাঙার তদারকির জন্য হয়তো পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী নির্দিষ্ট করতে হতে পারে। জোগাতে হবে মামলার খরচও। তবে কঠিনতম কাজটি হল, অবৈধ নির্মাণে যুক্ত প্রোমোটার চক্রের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। এ বছর ১৭ মার্চ গার্ডেনরিচের একটি বহুতল ভেঙে তেরো জনের মৃত্যুর পরে দেখা গিয়েছিল, এক জনই প্রধান প্রোমোটারের অধীনে ওই এলাকার অধিকাংশ অবৈধ নির্মাণ গড়ে উঠছে, নানা ঠিকাদারের নামে সেগুলি নথিভুক্তি হচ্ছে কেবল।

Advertisement

রাজনীতিই এমন প্রভাবশালীদের তৈরি করে। তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবৈধ নির্মাণকে ‘সামাজিক ব্যাধি’ বলে অভিহিত করলেও, ব্যাধির শিকড় যে দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিতে, সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। যে কোনও বড় বিপর্যয়ের পর প্রশাসন ও শাসক দলের একাংশ দিন গুনতে থাকে, কবে বিষয়টি চোখের আড়ালে চলে যাবে। কিছু দিন শোরগোল ওঠার পরে, নতুন সঙ্কট এসে পুরনো সঙ্কটকে ভুলিয়ে দেবে। উড়ালপুল ভাঙার পর কিছু দিন সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়, একটি জলাধার ভাঙার পরে বিভিন্ন জলাধারের জীর্ণতা নিয়ে সমীক্ষা চলে। অতঃপর সংবাদের দৃষ্টি ঘুরে যায় অন্য দিকে, সুরক্ষার দাবি উপেক্ষিত হয়।

গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তেরোটি অপমৃত্যুকে পুরসভা, পুলিশ ও রাজ্য সরকার যাতে সহজে ভুলতে না পারে, সে দায়িত্ব কিছুটা নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমকেও নিতে হবে। বিপজ্জনক নির্মাণ নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে রাজ্য জুড়ে যে প্রশ্নগুলি উঠেছিল, রাজ্যের সব পুরসভাতেই সে প্রশ্নগুলি তুলতে হবে। অবৈধ নির্মাণ, পুকুর ভরাট প্রভৃতি যে বিভিন্ন পুর কর্তৃপক্ষের নাকের নীচেই চলছে, নানা সংবাদমাধ্যমে তার সাক্ষ্য নিয়মিত মেলে। কলকাতা এবং জেলাগুলিতে জলাধার কিংবা নদী বুজিয়ে দেওয়া, তার উপরে বাড়ি-ঘর, ইটভাটা প্রভৃতি তৈরির বিরুদ্ধে নাগরিক সংগঠনগুলিও সরব হয়েছে। অথচ, প্রতিবাদীদের উপরেই আঘাত নেমে আসছে, নানা ধারায় মামলা করছে পুলিশ। নির্মাণশিল্পের নিরিখে পরিবেশ সুরক্ষা কিংবা আইন রক্ষা সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে, তেমন দাবি রাজ্যের শাসক দলের সমর্থকরাও করতে পারেন কি? দুর্বৃত্তদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ, সরকারি প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট-রাজ রাজ্যকে দূষিত করছে। বিপজ্জনক নির্মাণের মতো, নড়বড়ে হয়েছে আইনের শাসনও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement