Foreign Journalists

বহিষ্কৃত

মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, সংবাদ ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এ বছর ১৫৯তম। প্যালেস্টাইনের ইজ়রায়েল-অধিকৃত ভূখণ্ডে এখন সাংবাদিকদের যেমন দশা, বলা হচ্ছে তুল্যমূল্য বিচারে ভারতেও তেমনটাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ০৯:১১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ভানেসা দুনক, অবনী ডায়াস, সেবাস্তিয়াঁ ফারসি— নামগুলি সাধারণ্যে খুব পরিচিত নয়। তাঁরা পরিচয়ে সাংবাদিক: ভানেসা ভারতে কাজ করেছেন কুড়ি বছরেরও বেশি, এ দেশে সবচেয়ে বেশি সময় কর্মরত বিদেশি সাংবাদিক তিনি; সেবাস্তিয়াঁও ছিলেন তেরো বছর। সবচেয়ে বড় কথা, জন্মসূত্রে বিদেশি হলেও এঁরা ভারতকে আপন করে নিয়েছিলেন কাজ ও বিবাহসূত্রে, হয়ে উঠেছিলেন ‘ওভারসিজ় সিটিজ়েন অব ইন্ডিয়া’ (ওসিআই)। কিন্তু এ বছর কাজ, পরিবার ও ‘দেশ’ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে এই সাংবাদিকদেরই, তাঁদের ওসিআই ও ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নবীকরণ করেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ বছরের গোড়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র ভারত সফরের ঠিক আগে ভানেসাকে বলা হয় কারণ দর্শাতে— কেন তাঁর ওসিআই মর্যাদা বাতিল করা হবে না; লোকসভা নির্বাচন শুরুর ঠিক আগে অবনী একটি সূত্রে জানতে পারেন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কাজ ‘মাত্রা ছাড়িয়েছে’ অতএব ভিসা বাড়ানো হবে না, পরে শেষ মুহূর্তে নবীকরণ হয়। সেবাস্তিয়াঁর ক্ষেত্রে, কিমাশ্চর্যম্‌, কোনও ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়নি!

Advertisement

অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণে অবাক হওয়ার কারণ নেই। সাংবাদিককুলের প্রতি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের অপ্রীতি কোনও নতুন কথা নয়, বিশেষত যাঁরা ‘কানু বিনা গীত নাই’ গাইতে অভ্যস্ত নয় তাঁদের প্রতি। যে প্রধানমন্ত্রী কদাপি সংবাদ সম্মেলন করেন না, সাংবাদিকদের সম্পর্কে তাঁর সরকারের মনোভাব এ দেশের সাংবাদিকদের জানা: সরকারের সমালোচনা করলেই ধেয়ে আসবে দেশদ্রোহী, ভারতবিদ্বেষী তকমা, তারই পথ ধরে আসবে সাংবাদিক-হেনস্থা, নিপীড়ন, দমন— হুমকি দিয়ে, প্রাণের ভয় দেখিয়ে, কাজে বাধা দিয়ে বা উত্ত্যক্ত করে, সর্বোপরি জাতীয় নিরাপত্তা আইন ও কুখ্যাত ইউএপিএ আইনে জেলে ভরে। এই সবই গত দশ বছরে ভারতীয় সাংবাদিকদের কাজের নিত্যসঙ্গী— এ বার তা নেমে আসছে বিদেশি সাংবাদিকদের উপরেও, একটু অন্য ভাবে। ভারতে বিদেশি সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে এমনিতেই বহু বিধিনিষেধ: জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ বহু জায়গায় হয় মুখের উপর দরজা বন্ধ নয়তো প্রতি পদে অনুমতির ঝক্কি। উপরন্তু, ওসিআই মর্যাদা থাকুক বা না থাকুক, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কুমিরছানাটি বারংবার দেখিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের নিবৃত্ত করা খুব সহজ, ভিসা বা কাজের অনুমতির ব্যাপারেও সরকারি ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ত দেওয়ার ঝামেলা নেই।

মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, সংবাদ ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এ বছর ১৫৯তম। প্যালেস্টাইনের ইজ়রায়েল-অধিকৃত ভূখণ্ডে এখন সাংবাদিকদের যেমন দশা, বলা হচ্ছে তুল্যমূল্য বিচারে ভারতেও তেমনটাই। এ তথ্যেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু যায় আসে না। তবে তাঁর বোঝা দরকার, বিদেশি সাংবাদিকদের ভারতছাড়া করার সঙ্গে শুধু সাংবাদিকের অধিকার ভূলণ্ঠনই নয়, যে দেশের সাংবাদিককে ফেরার রাস্তা ধরিয়ে দেওয়া হল সেই দেশের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কের প্রশ্নটিও জড়িয়ে। ভানেসা ও সেবাস্তিয়াঁর ঘটনায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অস্বস্তিতে পড়েছে, এ বার ফ্রান্স বা অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত ভারতীয় ও বিশেষত ভারতীয় সাংবাদিকদের উপর প্রত্যাঘাত নেমে এলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ কী বলবেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement