Photosynthesis in Trees

পাতার মৃত্যু

বিপদঘণ্টি অবশ্য বেজেছে বহু পূর্ব থেকেই। ১৯৮২ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছিল। পাল্লা দিয়ে সালোকসংশ্লেষের হারও লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি থেকে জল আর বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে সূর্যালোকের সাহায্যে তাদের অক্সিজেন আর শর্করায় পরিণত করে। অক্সিজেন মেশে পরিবেশে আর শর্করা জমা হয় গাছের ভিতর এবং মাটির মধ্যে। তাই বাতাসে ক্রমবর্ধমান কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ কমাতে আরও বেশি বৃক্ষরোপণ এবং সবুজ আচ্ছাদনের পরিমাণ বৃদ্ধিকেই উপায় হিসাবে নির্দেশ করে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই সহজ সমাধানটিও বর্তমানে হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এক উদ্বেগজনক তথ্য— ২০০০ সাল থেকেই বিশ্বে গাছের সালোকসংশ্লেষের হার ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে। এর কারণ হিসাবে সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নকে। বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলেই এই নতুন বিপদ চোখ রাঙাচ্ছে। নেচার পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা মোটামুটি ৪৬.৭ ডিগ্রি পার হলেই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে গাছের মৃত্যু ঘটে। এই বিপদসীমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ক্রান্তীয় অরণ্য অঞ্চল। এটি অতিক্রম করে গেলেই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি ভেঙে পড়বে।

Advertisement

বিপদঘণ্টি অবশ্য বেজেছে বহু পূর্ব থেকেই। ১৯৮২ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছিল। পাল্লা দিয়ে সালোকসংশ্লেষের হারও লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়। কারণ, কার্বন ডাইঅক্সাইডের সহজলভ্যতা এই প্রক্রিয়াকে গতিশীল করেছিল। কিন্তু ২০০০ সাল থেকেই সেই ঊর্ধ্বগতি ক্রমশ নামতে থাকে। গবেষকদের অনুমান, সম্ভবত বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে শুষ্ক বাতাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই এর কারণ। শুষ্ক বাতাসের পরিমাণ যখন বাড়ে, তখন পাতার ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণ জল বাষ্পমোচনের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে থাকে। অল্প সময়ে অনেক বেশি জল বেরিয়ে গেলে গাছ তার পাতার ছিদ্রগুলি বন্ধ করে দেয়, যাতে বাষ্পমোচন হ্রাস পায়। কিন্তু এই ছিদ্র দিয়েই কার্বন ডাইঅক্সাইডও পাতার ভিতর প্রবেশ করে বলে তা বন্ধ হয়ে গেলে গাছ প্রয়োজনীয় কার্বন ডাইঅক্সাইড পায় না। ফলে, সালোকসংশ্লেষের হার হ্রাস পায়।

বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্য থেকে গবেষকদের অনুমান, এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষ হ্রাস পাওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক এই কারণেই যে, এক বিশাল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলে শোষিত হয়। অথচ, এই অঞ্চলই দীর্ঘ সময় ধরে দাবানল, চোরাশিকার এবং বেপরোয়া গাছ কাটার সমস্যায় জর্জরিত। তদুপরি, ক্রান্তীয় অরণ্যের কিছু জায়গায় গাছের পাতাগুলি ইতিমধ্যেই তাপমাত্রার সহনক্ষমতা পার করে ফেলেছে। যদিও শতাংশের হিসাবে সেই সংখ্যা এখনও অতি নগণ্য, কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন বন্ধে রাষ্ট্রগুলি কার্যকর পদক্ষেপ না করলে অদূর ভবিষ্যতে তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যদি আরও অনেক পাতা ও গাছের মৃত্যু ঘটে, বিশেষত ক্রান্তীয় অঞ্চলে, তবে সামগ্রিক ভাবে বিশ্বের বাস্তুতন্ত্রের উপর তার প্রভাব যে ইতিবাচক হবে না, তা সংশয়াতীত। কিন্তু এত কাল অধিকাংশ সময় বক্তৃতা আর প্রতিশ্রুতিতে আটকে থাকা বিশ্বনেতারা সেই বিপদবার্তা শুনবেন কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement