Power Cut

আঁধার শহর

প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে জোগানে ঘাটতি কিংবা ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এক সময়ে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সাক্ষী ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩৭
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

যে  অজুহাত প্রতি বছর ঘুরেফিরে আসে, সেটি সময়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। তদুপরি, অজুহাত প্রদানকারীর অপদার্থতাকেও স্পষ্ট করে তোলে। কলকাতায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের প্রশ্নে রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিকে এই গোত্রে ফেলা অন্যায় হবে না। প্রত্যেক গ্রীষ্মে কলকাতা তাপপ্রবাহে পুড়তে শুরু করা মাত্র তার লেজুড় হয়ে লোডশেডিং-এর আবির্ভাব হয় এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশাকে এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। এই বছরেও অন্যথা হয়নি। এই বারও সিইএসসি নির্ভুল ভাবে অনুমোদনহীন এসি-র অতিরিক্ত লোডের প্রসঙ্গ টেনে এনে জানিয়েছে, কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু ওভারলোডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে কর্মীরা সেখানে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছেন। তবে তা কত ‘দ্রুত’, ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা অন্য প্রকার। সারা দিনের পরিশ্রমের পর লোডশেডিংয়ের মর্মান্তিক ধাক্কায় রাতের নিশ্চিন্ত ঘুমটি যদি তিন-চার ঘণ্টার জন্য বিদায় নেয়, তবে ‘দ্রুত’ ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভক্তিভাব জাগে না।

Advertisement

প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে জোগানে ঘাটতি কিংবা ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এক সময়ে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সাক্ষী ছিল। ১৯৯০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জেরবার প্রায় ৩০০০ কলকাতাবাসী এক অভূতপূর্ব মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩৪ বছর পরও নিদাঘতপ্ত দিনগুলিতে দুর্দশাচিত্র প্রায় একই থেকে গেলে বিস্ময় জাগে বইকি। অথচ, কিছু মাস আগেও রাজ্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জোগানোর জন্য তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছিল। বিদ্যুৎমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সদর দফতরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়। সিইএসসি সূত্রেও বিভ্রাট এড়াতে উন্নততর প্রযুক্তি আমদানির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তৎসত্ত্বেও ঘন ঘন লোডশেডিং অব্যাহত থেকেছে। অথচ, গত কয়েক বছরে কলকাতা তীব্রতর গ্রীষ্মের সম্মুখীন বিশ্ব উষ্ণায়নের কল্যাণে, মধ্যবিত্ত গৃহ তো বটেই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, দোকান-বাজারও বাতানুকূল হয়েছে। সেই অতিরিক্ত চাহিদার মোকাবিলা সফল ভাবে করবে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি— এমনই প্রত্যাশা ছিল। কারণ, বিদ্যুৎ দৈনন্দিন যাপনের অত্যাবশ্যক অঙ্গ। জীবনদায়ী ওষুধের সংরক্ষণ, হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা থেকে অনলাইন কাজ— বিদ্যুতের ব্যবহার সর্বত্র। বিকল্প জেনারেটর বা ইনভার্টারের সুবিধা সর্বত্র মেলে না, মিললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এমত অবস্থা জানা সত্ত্বেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

অননুমোদিত বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবহার নিঃসন্দেহে বড় সমস্যা। সিইএসসি সূত্রেই জানা গিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য আবেদন যা জমা পড়ে, বাজারে বিক্রয় হয় তার কয়েকগুণ বেশি। অধিকাংশটাই অননুমোদিত। এই বাড়তি লোডই বহু জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিবিধান করা না হলে এই প্রবণতা কমবে না। সমস্যা অন্যত্রও আছে। বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি যথেষ্ট। উৎপাদন সংস্থার টাকা না মেটানোর কারণে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি থেকে যায়। এর সমাধানও আশু প্রয়োজন। শুধুমাত্র গ্রাহকের নির্বুদ্ধিতার উপর দায় চাপালে গরমে অতিষ্ঠ হওয়ার হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement