Narendra Modi

ধূলিসাৎ

ভুল করিয়াও কাজে মন নাই, টিভির পর্দায় মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রীর আবেগরুদ্ধ বক্তব্য আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৫:৩০
Share:

ফাইল চিত্র।

কায়ামূর্তি ও ভাবমূর্তি, নরেন্দ্র মোদীর দুইটিই সযত্নলালিত। দশলাখি সুট, রবীন্দ্রবেশী শ্মশ্রুই হউক বা তাঁহার সরকারপোষিত ‘ভারত’-এর ভাবমূর্তি, শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয়িত হয় অকাতরে। সেই ভাবমূর্তি সম্প্রতি তুঙ্গস্পর্শী হইয়াছিল— টিকা তৈরি, রফতানি ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ প্রকল্পে কোভিড রুখিয়া দিবার গর্ব। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ আসিয়া সেই ভাবমূর্তি ডুবাইল। এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম একযোগে বলিতেছে, ভারতে বিপুল মৃত্যু, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভাঙন, টিকার অভাব বা টিকাকরণের শ্লথ গতি, সব কিছুর জন্যই দায়ী নরেন্দ্র মোদী সরকারের অদূরদর্শিতা, পরিকল্পনাহীনতা, আত্মসন্তুষ্টি। কুম্ভমেলার অনুমতিদান ও সমর্থন, কোভিডের প্রকোপ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভার ন্যায় ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’গুলিও সমালোচিত। আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদকীয়তেও স্থান করিয়া লইয়াছে মোদী সরকারের কোভিড-ব্যর্থতা।

Advertisement

প্রবাদে বলে, ব্যর্থতাই সাফল্যের স্তম্ভ। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার সরকার পুরাণাদিতে যত বিশ্বাসী, প্রবাদবাক্যে তত নহে। নিজের ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি লইয়া তিনি অতি স্পর্শকাতর— সাফল্যের প্রচারে প্রগল্‌ভ, ব্যর্থতার প্রশ্নে খড়্গহস্ত। কোভিড-মোকাবিলায় দিশারি ভারত কোন অবহেলায় বিশ্বমঞ্চে সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ উদাহরণ হইয়া উঠিল, সেই সমালোচনা হইতে ঝাঁঝটুকু বাছিয়া তিনি সারটুকু লইতে পারিতেন, প্রকৃত নেতার তাহাই করণীয়। ভুল হইয়াছে, আত্মসন্তুষ্টিতে ভাসিয়া বিপথগমন হইয়াছে— স্বীকার করিয়া, ঠিক পথে ফিরিবার দরকার ছিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হইতে শুরু করিয়া তাঁহার রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাহা বারংবার বলিয়াছেন, বহির্বিশ্বও যারপরনাই সরব। কিন্তু তাঁহার শুনিবার সাধ কম, বলিবার তাড়া বেশি। ভগ্ন ভাবমূর্তিকে জবরদস্তি খাড়া করাইবার মরিয়া নমুনা দেখা যাইতেছে তাঁহার সরকারের আচরণে। সমালোচনা মাত্রেই দেশদ্রোহিতা; ‘আমাদের শিশুদের টিকা বিদেশে পাঠাইয়া দিলেন কেন’, পোস্টারের পরিণতি পুলিশি গ্রেফতার; কখনও টুইটার কর্তৃপক্ষকে বার্তা— সরকারের সমালোচনামূলক টুইট মুছিয়া ফেলা হউক। আন্তর্জাতিক সমালোচনা রুখিতেও চেষ্টা কম হয় নাই। নরেন্দ্র মোদী ভারতকে এক ভাইরাসঘটিত মহাপ্রলয়ের পথে আগাইয়া দিয়াছেন, অস্ট্রেলিয়ার এক কাগজে এহেন সংবাদ প্রকাশে স্থানীয় ভারতীয় হাই কমিশন সম্পাদককে চিঠি পাঠাইয়াছে, ইহা ভারতকে খাটো করিয়া দেখাইবার প্রয়াস। এই প্রবণতা নূতন নহে। কৃষক আন্দোলন লইয়া আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের টুইট-মন্তব্যকে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ বলিয়া দাগাইয়াছিল মোদী সরকার, দেশীয় ‘খ্যাতনামা’দের দিয়া পাল্টা টুইট-বান ডাকাইয়াছিল। এই বারেও ভাবমূর্তি বজায় রাখিতে উন্মুখ সরকার নানা পন্থা লইতেছে। ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক ভাষ্য বদলাইতে আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের লইয়া ‘ছাত্র-হাব’ গড়িতেছে, অতিমারিকালেও সরকারি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল গড়িতে দরপত্র হাঁকিতেছে— যদি তাহাতে মুখরক্ষা হয়।

সরকারের হাবেভাবেই প্রকট, তাহার স্পর্ধা এখনও যায় নাই, বিনয় আসা দূরস্থান। ভুল করিয়াও কাজে মন নাই, টিভির পর্দায় মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রীর আবেগরুদ্ধ বক্তব্য আছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর হইতেছে, ভারতে এক দিকে টিকা অমিল, অন্য দিকে কিছু মানুষ করোনা-রোধে গোময়-গোমূত্র মাখিতেছেন। দুইটি টিকার উৎপাদক, বিশ্বে সর্বাধিক টিকা রফতানিকারী রাষ্ট্রের গৌরবধন্য ‘ইন্ডিয়া’ আজ হতমান ‘ভারত’-এ পর্যবসিত। অতীতজীবী, বর্তমানান্ধ, ভবিষ্যৎবিমুখ এই ‘ভারত’ বিশ্বমঞ্চে গৌরবোজ্জ্বল ‘ইন্ডিয়া’র ভাবমূর্তি খানখান করিতেছে। সারা বিশ্ব বুঝিতেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়াও বুঝিতেছেন না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement