Hathras Gang Rape

(অ)বিচার

আবেদন মঞ্জুর হয় নাই। নবতিপর মুমূর্ষু মা বারংবার তাঁহার কথা বলিতেছেন, তাঁহাকে এক বার দেখিতে চাহিতেছেন, এই মানবিক যুক্তিতেও নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২৬
Share:

চার মাসের বেশি হইয়া গিয়াছে, এখনও কারাবন্দি কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। গত বৎসর অক্টোবরে হাথরসে খবর করিতে যাইবার পথে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হইয়াছিলেন, তাঁহার বিরুদ্ধে কঠোর ইউএপিএ আইনে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। এই দীর্ঘ সময়ে সুপ্রিম কোর্ট ছয় বার মামলার শুনানি মুলতুবি রাখিয়াছে, এক-একটি শুনানির মধ্যে কাটিয়া গিয়াছে চার দিন হইতে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত! প্রতি বার শুনানির সময় নতুন নতুন ধারায় অভিযোগও আনা হইয়াছে। দলিত তরুণীর ধর্ষণের খবর করিতে গিয়া গ্রেফতার সাংবাদিককে শুনিতে হইয়াছে তাঁহার পরিচয়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ, তিনি জাতপাত সংক্রান্ত উত্তেজনা উস্কাইয়া দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, জঙ্গি মনোভাবাপন্ন সংগঠনের সদস্য। তাঁহার গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করিয়া, জামিনে মাত্র পাঁচটি দিনের জন্য তাঁহার মুক্তির আর্জি জানাইয়া আদালতে গিয়াছে কেরলের সাংবাদিক ইউনিয়ন। আবেদন মঞ্জুর হয় নাই। নবতিপর মুমূর্ষু মা বারংবার তাঁহার কথা বলিতেছেন, তাঁহাকে এক বার দেখিতে চাহিতেছেন, এই মানবিক যুক্তিতেও নহে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভারতে সাংবাদিকের স্বাধীনতা কোন অতলে তলাইয়া যাইতেছে তাহা তথ্যপরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। তাহার সার্বিক চিত্রটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশি হিংসা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আক্রমণে পঙ্কিল; ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪(এ) বা ৫০০ ধারা বা ইউএপিএ আইনের মুহুর্মুহু প্রয়োগে জর্জর। খবর করিতে গেলে, অপ্রিয় প্রশ্ন করিতে গেলে দেশদ্রোহী আখ্যা মিলিতেছে। কেবল সাংবাদিকরা নহেন, ইহার শিকার সাধারণ নাগরিকরাও— আজিকার ভারতে জানা কথা। তবে প্রশাসন যেখানে বিমুখ, আইন যেখানে বিরুদ্ধ, সেখানে বিচার ব্যবস্থার দ্বারা অন্তত সাংবাদিক তথা নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষিত হইবে, সেই আশা ছিল। কাপ্পান-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিক্রিয়া ও গতিপ্রকৃতিতে সেই আশায় সংশয় ঘনাইতেছে। পুলিশি হেফাজতে কাপ্পানের উপর শারীরিক অত্যাচার হইয়াছে, তাঁহার আইনজীবীকে পর্যন্ত তাঁহার সহিত দেখা করিতে দেওয়া হয় নাই, ফোনে কথা বলিতে দেওয়া হয় নাই। মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠিবার পর এখন এক-একটি শুনানির মধ্যেকার বিরতি ক্রমশ দীর্ঘায়িত, পরবর্তী তারিখ ধার্য হইয়াছে ৯ মার্চ। জামিনের আবেদনের পর তিন মাস অতিক্রান্ত, আদালতে তাহা আলোচনার তালিকায় উঠাইতেও বেগ পাইতে হইতেছে।

এই দীর্ঘসূত্রতা বা অসক্রিয়তার কোনও ব্যাখ্যা মিলে না। ভারতের বিচার-প্রথামতে বরং এই ধরনের মামলা বা আবেদনকে বিচার ব্যবস্থার অগ্রাধিকার প্রদানই দস্তুর, এক সপ্তাহ হইতে পনেরো দিনের মধ্যে তাহা মিটাইবার কথা। কাপ্পানের হইয়া মামলা লড়িতেছে কেরলের সাংবাদিক ইউনিয়ন, তাহাদের নিযুক্ত আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর উদাহরণ দিয়াছেন। ২০১৮-র একটি মামলায় অভিযুক্ত অর্ণবকে এক দিনেই অন্তর্বর্তিকালীন জামিন দিয়াছিল আদালত। অথচ সেই আদালতই কাপ্পানের জামিনের আবেদনে কর্ণপাত করিতেছে না। লোক বুঝিয়া, বা তাহার প্রভাব-প্রতিপত্তি অথবা পৃষ্ঠপোষকের চরিত্র দেখিয়া বিচারব্যবস্থার অতিসক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার ন্যায় অবিচার আর নাই। দুর্ভাগ্য, এই ভারতে তাহাই ঘটিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement