Caste-Based Survey In Bihar

বঞ্চনার তথ্য

বিহারের এই জনশুমারিটির রাজনৈতিক তাৎপর্য এখানেই যে, কেন্দ্রীয় সরকার যে ছবিটি দেখতে এবং দেখাতে চায় না, নীতীশ কুমারের সরকার তাকেই জনসমক্ষে নিয়ে এল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৩৫
Share:

নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।

বিহারে জাতিভিত্তিক জনগণনার ফলাফল প্রকাশ প্রাক্‌-২০২৪ রাজনীতিতে একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর কেবলমাত্র গণনার ফলাফলের মধ্যে সন্ধান করলেই চলবে না। দেশব্যাপী এ-হেন জনগণনা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনমনীয় অনীহার বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। বিহারের জনগণনার ফলাফল থেকে দু’টি কথা বিশেষ ভাবে স্পষ্ট। এক, এখন জাতিপরিচিতির ভিত্তিতে যত শতাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে, মোট জনসংখ্যায় সব অনগ্রসর শ্রেণির মিলিত অনুপাত তার চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশি; এবং দুই, ২০১১ সালে, ইউপিএ সরকারের আমলে হওয়া সোশিয়ো ইকনমিক অ্যান্ড কাস্ট সেন্সাস-এর পরিসংখ্যান থেকে ২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুমান করলে বিভিন্ন অনগ্রসর শ্রেণির জনসংখ্যায় অনুপাত বৃদ্ধির যে হার মেলে, প্রকৃত হার তার চেয়ে বেশি। অনস্বীকার্য যে, বিহারের জাতিভিত্তিক জনগণনার যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে, তা কেবলমাত্র সেই রাজ্যেরই। কিন্তু, অন্য দু’টি কথা একই রকম অনস্বীকার্য— এক, বিহারের প্রবণতা দেশের অন্যান্য রাজ্যের প্রবণতার চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পৃথক হওয়ার কোনও কারণ নেই; এবং দুই, কোন রাজ্যে কী পরিস্থিতি, এবং সার্বিক ভাবে ভারতের ছবিটি কী, তা জাতিভিত্তিক জনশুমারি না হলে জানার উপায় নেই। বিহারের এই জনশুমারিটির রাজনৈতিক তাৎপর্য এখানেই যে, কেন্দ্রীয় সরকার যে ছবিটি দেখতে এবং দেখাতে চায় না, নীতীশ কুমারের সরকার তাকেই জনসমক্ষে নিয়ে এল। এই জনশুমারির ফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই বর্ধিত সংরক্ষণের দাবি উঠতে শুরু করেছে। সেই দাবির ন্যায্যতা বা তা পূরণের সুবিধা-অসুবিধা ভিন্নতর আলোচনার বিষয়— কিন্তু, সামাজিক ন্যায়ের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি যাতে না ওঠে, তার জন্যই কি কেন্দ্রীয় সরকারের জাতিভিত্তিক জনগণনায় এমন তুমুল আপত্তি?

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যে দিন এই জনশুমারির ফলাফল প্রকাশিত হল, সে দিনই এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, বিরোধী রাজনীতি এখনও জাতপাতের ‘পাপ’ নিয়ে বেসাতি করে চলেছে, উন্নয়নের দিকে তাদের নজর নেই। প্রধানমন্ত্রী কার উন্নয়নের কথা বলছেন? ভারতে দারিদ্র থেকে অলাভজনক কর্মসংস্থান বা বেকারত্ব, স্বাস্থ্যহীনতা থেকে শিক্ষায় পশ্চাৎপদতা, সামাজিক চলমানতার ঘাটতি, অনুন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই বর্ণহিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন অনগ্রসর শ্রেণির মানুষরা, এবং সংখ্যালঘুরা। উন্নয়নের এই অসাম্যকেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী ‘উন্নয়ন’ বলে ভুল করছেন। উন্নয়নের পরিসরে জাতপাতের প্রশ্নটিকে অস্বীকার করতে পারলে লাভ একমাত্র বর্ণহিন্দুদেরই, কারণ ঐতিহাসিক ভাবে অন্যদের বঞ্চনার মূল্যে তাদের সমৃদ্ধি বজায় থেকেছে। অতএব, যে বিরোধী রাজনীতি উন্নয়নের পরিসরে জাতপাতের প্রশ্নটিকে খুলতে চায়, প্রকৃত প্রস্তাবে তারাই উন্নয়নের রাজনীতির কথা বলছে।

অনগ্রসর শ্রেণি নিয়ে বিজেপি রাজনীতির এই বিড়ম্বনা নতুন নয়। বর্ণশ্রমভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় গৈরিক শিবিরের আস্থা প্রশ্নাতীত। অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে তারা বৃহৎ হিন্দুত্বের ছাতার তলায় আনতে চায় বটে, কিন্তু তার পিছনে তাগিদ শুধুই হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের সংখ্যাবৃদ্ধি। অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের কোনও প্রশ্নেই তাদের আগ্রহ নেই, থাকার কথাও নয়। সমস্যা হল, মণ্ডল কমিশন-উত্তর ভারতে শুধুমাত্র বর্ণহিন্দুর স্বার্থরক্ষার রাজনীতি বিপজ্জনক— বিহারের জাতিভিত্তিক জনগণনা নিয়ে তৈরি হওয়া টানাপড়েনেও তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষের সামাজিক ন্যায় আদায়ের দাবি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত। সরাসরি তাকে নাকচ করে দেওয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতা বিজেপির নেই। জাতিভিত্তিক জনগণনা না করা, অথবা কোনও রাজ্যে সেই গণনা হলে তার ফলাফলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা আসলে খিড়কি দিয়ে উচ্চবর্ণের সুবিধাবাদের রাজনীতিকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement