Internet Connection

নাগরিক

আজিকার দুনিয়ায় ইন্টারনেট এক অত্যাবশ্যক পরিষেবা, শিক্ষা ব্যতীত জীবনযাপনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহার প্রয়োজন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৪:৪৫
Share:

চার বন্ধু মিলিয়া ওয়াই-ফাই সংযোগ স্থাপন করিলেন ঝাড়গ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বেলিয়াবেড়া ব্লকের ভামাল গ্রামটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ট্যাবের টাকা পৌঁছাইলেও আন্তর্জাল-যোগ অতি ক্ষীণ, সুষ্ঠু ভাবে ক্লাস করা অসম্ভব। নূতন ব্যবস্থায় ইন্টারনেটে গতি আসিবার ফলে যুবাগণের প্রতি গ্রামবাসী যৎপরোনাস্তি কৃতজ্ঞ। ইদানীং নাগরিক সমাজের বহু উদ্যোগ নজর কাড়িতেছে, কোভিড রোগীদের জন্য ওষুধ-অক্সিজেন-খাদ্যের জোগানে নিরন্তর নিয়োজিত হইয়াছে বহু ব্যক্তি ও সংগঠন। অতিমারির কালে আপৎকালীন সহায়তার উদ্যোগ জীবনদায়ী— সমাজ রক্ষার সহায়ক। পড়ুয়াদের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবস্থা আরও এক ধাপ উচ্চে আসীন, কেননা উহা সুস্থায়ী, আজিকার দুনিয়ায় ইন্টারনেট এক অত্যাবশ্যক পরিষেবা, শিক্ষা ব্যতীত জীবনযাপনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহার প্রয়োজন। দৈনন্দিন বহু কার্য যাহার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, বহু কার্যে যাহার শরণ লইতে হয়, তাহাকে প্রাথমিক চাহিদা বলিয়া স্বীকার করিতেই হইবে। অতএব, উন্নত পথঘাট বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবার ন্যায় তাহাও নাগরিক সমাজের দাবিতে স্থান পাইতেছে। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবোন্নয়ন রিপোর্টে বলা হইয়াছিল, অসাম্যের একটি মূল সূচক ‘ডিজিটাল ডিভাইড’, অর্থাৎ প্রযুক্তির নাগাল পাইবার তারতম্য। প্রযুক্তি অধিগত করিবার ক্ষমতার বৈষম্যের ছাপ মানবোন্নয়নে স্পষ্ট। এক্ষণে পশ্চিমবঙ্গের এক ক্ষুদ্র পল্লির এই নাগরিক উদ্যোগ তাই সামাজিক ভাবেও অতি জরুরি। আত্মশক্তি গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছিলেন: নব নব শতাব্দীতে রাজন্যবর্গ যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যরক্ষা ও বিচারকার্য অতিবাহিত করিলেও, ‘বিদ্যাদান হইতে জলদান পর্যন্ত সমস্তই সমাজ এমন সহজভাবে সম্পন্ন করিয়াছে’।

Advertisement

প্রশ্ন তবু রহিয়া যায়। সমাজের উৎসাহ ও সহমর্মিতা প্রশংসনীয়, কিন্তু সরকার তাহার দায়িত্ব পালন করিতেছে না কেন? অত্যাবশ্যক পরিষেবার ব্যবস্থা করিতে না পারিলে সরকারের অভিমুখে আঙুল উঠিবেই। এবং ইহা যে অত্যাবশ্যক, সরকারও তাহা অস্বীকৃত নহে। ক্রমশ সকল দফতরের ‘ডিজিটাইজ়েশন’ এবং সকল পরিষেবার অনলাইন ব্যবস্থা তাহারই প্রমাণ। অতিমারির কালে এবং তৎপূর্বেও কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই বারংবার ই-গভর্ন্যান্সের বিষয়ে জনতাকে তৎপর করিতে প্রচার চালাইয়াছে। কেবল যাঁহাদের জন্য প্রচার, বক্তব্যটুকু তাঁহাদের অবধি নিশ্চিত ভাবে পৌঁছায় নাই, প্রত্যন্ত গ্রামবাসীর জন্য সুষ্ঠু ইন্টারনেট ব্যবস্থা সরকার তৈয়ারি করিতে পারে নাই। আপনার অবস্থানে সৎ থাকিতে হইলে দেশের ও রাজ্যের প্রতিটি কোণে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিকাঠামো সরকারকেই পৌঁছাইতে হইবে, আপনার খরচে না হইলে স্থানীয় ভাবে ব্যবস্থা করিতে হইবে, যে কাজ আপাতত নাগরিকগণ চালাইয়া লইতেছেন। গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট পৌঁছাইয়া দেওয়া যথেষ্ট লাভজনক না হইলে বাজার আগ্রহী হইবে না; সহযোগিতা ব্যতিরেকেই দায়িত্ব পালন করিতে হইবে সরকারকে। যাহা যোগাযোগের এক বুনিয়াদি মাধ্যম, যাহার মাধ্যমে স্বাস্থ্য হইতে শিক্ষার ন্যায় পরিষেবা চলে, তাহা সকলের নিকট না পৌঁছানোর অর্থ নাগরিকের অস্বীকৃতি। সুতরাং রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করিতে যেমন প্রাথমিক পরিষেবা পৌঁছাইতে হয়, তেমনই সুচিন্তিত নীতি লইয়া সেই পরিষেবায় ইন্টারনেটকেও অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement