National Defence Academy

যুদ্ধজয়

যথাযথ প্রশিক্ষণ পাইলে মহিলা সৈন্যরাও যে ভয়ানক পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করিতে পারেন, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে বহু দেশে। ভারতের মেয়েরা পারিবেন না কেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০৭
Share:

ফাইল চিত্র।

অবশেষে সুখবর। শীর্ষ আদালতে কেন্দ্র জানাইল, সামরিক বাহিনীতে যোগদানের প্রশিক্ষণের জন্য এখন মেয়েরাও ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে (এনডিএ) প্রবেশ করিতে পারেন। অতি অনিচ্ছায় এই স্বীকৃতি দান। ইতিপূর্বে আদালত জানাইয়াছে, সামরিক বাহিনীতে মেয়েরাও স্থায়ী কমিশন পাইবার অধিকারী। মহিলা বলিয়াই তাঁহাদের স্বল্পমেয়াদি, অস্থায়ী পদে সীমাবদ্ধ রাখা লিঙ্গবৈষম্যের প্রকাশ। এই মামলাটির শুনানিতে বারংবার আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়িয়াছে ভারতের সামরিক বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মেয়েদের শারীরিক ক্ষমতার ন্যূনতার যুক্তি উড়াইয়াছে আদালত, এনডিএ-কে ‘কো-এডুকেশন’ না করিবার যুক্তি খুঁজিয়া পান নাই বিচারপতিরা, সামরিক বাহিনীতে মেয়েদের কেবল সহযোগীর ভূমিকায় রাখিবার চেষ্টায় তাঁহারা ক্ষুব্ধ। সামরিক বাহিনীতে লিঙ্গসাম্যের জন্য কেন বার বার আদালতকে নির্দেশ দিতে হইবে, কেন বাহিনী স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তাহা নিশ্চিত করিবে না, সেই প্রশ্ন তুলিয়াছেন বিচারপতিরা। উত্তর অজানা নহে— পুরুষতন্ত্র সহজে তাহার জমি ছাড়িতে চাহে না। সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মেয়েদের দক্ষতা, এমনকি নেতৃত্বক্ষমতাও সুপ্রতিষ্ঠিত। নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীতেও মেয়েরা কুশলতা, পেশাদারিত্ব এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়াছেন। বাকি রহিয়াছে পেশিশক্তি, যাহা পুরুষ-প্রাধান্যের দাবির শেষ আশ্রয়। হাতাহাতি যুদ্ধে মেয়েরা আঁটিয়া উঠিবে না, এই পরিচিত যুক্তিও এখন তামাদি। আধুনিক যুদ্ধের সামান্যই পেশিশক্তিনির্ভর, তাহা প্রধানত প্রযুক্তিনির্ভর। তদুপরি, যথাযথ প্রশিক্ষণ পাইলে মহিলা সৈন্যরাও যে ভয়ানক পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করিতে পারেন, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে বহু দেশে। ভারতের মেয়েরা পারিবেন না কেন?

Advertisement

মেয়েরা না পারিলে কী হইবে, ইহাই কি উদ্বেগের কারণ? না কি আসল ভয়, মেয়েরা পারিলে কী হইবে? কর্মক্ষেত্রে ও সমাজ-সংসারে লিঙ্গবৈষম্যের সহিত যাঁহাদের কিছুমাত্র পরিচয় আছে, তাঁহারাই জানেন যে, সক্ষম সপ্রতিভ আত্মপ্রত্যয়ী মেয়েরা পুরুষতন্ত্রকে বড়ই ঝুঁকির মুখে ফেলিয়া দেন। আইন, বিধি তৈরি করিয়া শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের প্রবেশ আটকাইবার চেষ্টার এক দীর্ঘ ইতিহাস রহিয়াছে। তাহাতে না কুলাইলে আছে সামাজিক রীতির দোহাই— যাহা আগে কখনও হয় নাই, তাহা আজ হইবে কী করিয়া? কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশাধিকার দাবি করিলে যে সকল আপত্তি উঠিয়াছিল, আজ এনডিএ-তে মেয়েদের প্রবেশ লইয়াও সেই আপত্তিগুলিই উঠিয়াছে।

সেই আপত্তি আদালত খারিজ করিলেও, কর্মক্ষেত্র কি সেই মনোভাব হইতে মুক্ত হইবে? ইতিমধ্যেই কেন্দ্র আদালতে জানাইয়াছে, মেয়েদের প্রবেশের ‘পরিকাঠামো’ প্রস্তুত নাই, অতএব চলতি শিক্ষাবর্ষে মেয়েরা প্রবেশ করিতে পারিবেন না। ইহা কি বাস্তবিকই প্রস্তুতির অভাব, না কি সদিচ্ছার? খাতায়-কলমে সমানাধিকার থাকিলেও শিক্ষাক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্র বাস্তবে মেয়েদের প্রতি নির্দয় ও প্রতিকূল। মহিলারা দক্ষতা ও কর্তব্যপরায়ণতার সকল শর্ত পূরণ করিবার পরেও তাঁহাদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মী’ করিয়া রাখিতে চায় কর্মক্ষেত্র। সামরিক বাহিনীতে যে দিন পূর্ণ-প্রশিক্ষিত মহিলারা স্থায়ী কমিশনে কাজ শুরু করিবেন, সেই দিন তাঁহাদের সম-মর্যাদা আদায়ের যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement