Ajaz Patel

স্বপ্নসন্ধানী

শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত বিশ্বে আজাজ়ের ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ কথা নহে, ৯/১১ পরবর্তী পৃথিবীতে তো আরওই নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৪
Share:

জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলের পর যে ক্রিকেটীয় রেকর্ড গড়িলেন আজাজ় ইউনুস পটেল, তাহা রেকর্ডবইতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকিবে। কিন্তু যাহার উল্লেখ থাকিবে না, হয়তো কালের গর্ভে তলাইয়া যাইবে, তাহা আরও এক রেকর্ড— আজাজ় প্রথম মুসলমান ক্রিকেটার, যিনি নিউ জ়িল্যান্ডের জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলিবার সুযোগ পাইলেন। ক্রীড়ামঞ্চে ধর্মপরিচয়ের অবতারণায় ভ্রুকুঞ্চিত হইতে পারে, তবে প্রশ্নটি অনভিপ্রেত নহে। দক্ষিণ গোলার্ধের দ্বীপরাষ্ট্রটি সাংস্কৃতিক বহুত্বের যে আকাঙ্ক্ষা সগর্বে উচ্চারণ করিয়া থাকে, আজাজ়ের কৃতিত্ব তাহার সুন্দর বিজ্ঞাপন, পাথুরে প্রমাণও বটে। ১৯৭০-এর দশক হইতে ক্রমশ অভিবাসনবান্ধব নীতি প্রণয়ন করিয়াছে নিউ জ়িল্যান্ড, বিশেষত এশীয়দের আহ্বান জানাইয়াছে শ্বেতাঙ্গপ্রধান এই দেশ। স্মরণে থাকিবে, দ্বীপরাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা মাওরি-রাও একদা পলিনেশিয়ার অপরাপর দ্বীপ হইতে আসিয়াছিল; অতঃপর ইউরোপের নানা দেশ হইতে অভিবাসীদের আগমন। আজাজ়ও আট বৎসর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরিয়া দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছাইয়াছিল। যে রঙিন স্বপ্ন লইয়া বিভুঁইয়ে অসিয়াছিল এই পরিবার, আজাজ়ের হাতে তাহা সফল হইল।

Advertisement

চলিবার পথ যদিও মসৃণ ছিল না। ক্রিকেটেও নহে, সমাজেও নহে। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বিফলতার পরে ঊনবিংশবর্ষীয় আজাজ় বুঝিয়াছিলেন, ফাস্ট বোলিং তাঁহার ক্ষেত্র নহে। অতঃপর স্পিন বোলিংয়ের প্রচেষ্টা। প্রায় এক যুগ ঘাম ঝরাইয়া ত্রিশ
বৎসর বয়সে জাতীয় দলে ঢুকিবার সুযোগ, এবং অভিষেকেই বাজিমাত। ইতিহাসের সহিত ক্রমাগত মোলাকাত হইতেছে এই ক্রিকেটারের। প্রথম সিরিজ়ের দুইটি টেস্টে এক-এক ইনিংসে পাঁচটি করিয়া উইকেট লইয়া ৪৯ বৎসর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশকে অ্যাওয়ে সিরিজ় উপহার দেন আজাজ়। ইহার পর ভারতের মাটিতে দশ উইকেট। বহু বৎসর পূর্বে উন্নততর জীবনের লক্ষ্যে পরিবারের সহিত যে শহর ত্যাগ করিয়াছিলেন আজাজ় পটেল, সেই শহরের মাঠই তাঁহাকে বিশ্ববন্দিত নায়ক বানাইল— এই ঘটনায় যে রোমাঞ্চ আছে, তাহা বস্তুত আজাজ় পটেলের জীবনসংগ্রামের খণ্ডমাত্র।

শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত বিশ্বে আজাজ়ের ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ কথা নহে, ৯/১১ পরবর্তী পৃথিবীতে তো আরওই নহে। ২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ভয়াবহ নিধনযজ্ঞের কথা এখনও নাগরিকদের মনে স্পষ্ট। আজাজ়ও একদা ধর্মপরিচয় লইয়া সবিশেষ আগ্রহী না হইলেও গত দুই বৎসরে নিজের পরিচিতি সম্পর্কে ক্রমশ সচেতন হইয়াছেন, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের ইসলাম-বিদ্বেষের পরিপ্রেক্ষিতে তাহা জোরালো ভাবে প্রকাশ করিয়াছেন। মুসলমান রাগবি খেলোয়াড় সোনি বিল উইলিয়ামস যখন নিউ জ়িল্যান্ডে বসবাসকারী পঞ্চাশ সহস্র মুসলমানের পরিচয়-তালিকা নির্মাণে উদ্যোগী হইলেন, তখন তাহার প্রচারেও ছিলেন আজাজ়। বস্তুত, সংগ্রামের কালে আজাজ় যাহা ভাবেন নাই, সাফল্যের চূড়ায় বসিয়া তাহা অনুধাবন করিয়াছেন। বিশেষ পরিচিতির ছাপ গাত্রে লইয়া তাঁহার দেশে উন্নতি করা কতখানি কঠিন, শীর্ষে আরোহণ করিয়া তাহা বুঝিয়াছেন এই ক্রিকেটার। স্বপ্ন অর্জন করিয়াই তাহা সন্ধানের পথটি চিনিতেছেন ও চিনাইতেছেন আজাজ় পটেল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement