ইউপিআই-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। প্রতীকী ছবি।
আপাতত দু’বছরের জন্য স্বস্তিতে ফোনপে এবং গুগল পে-র মতো থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রভাইডার, বা টিপিএপি-গুলি। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) জানিয়েছে, তাদের ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের সংস্থাগুলির লেনদেনের যে ঊর্ধ্বসীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার ছিল, তা আগামী দু’বছরের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। স্থির হয়েছিল, ইউপিআই প্ল্যাটফর্মে মোট যত টাকার লেনদেন হবে, কোনও টিপিএপি-ই তার ৩০ শতাংশের বেশি লেনদেন করতে পারবে না। গত তিন মাসের আর্থিক লেনদেনের হিসাব (থ্রি-মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ) থেকে যদি দেখা যায় যে, কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার লেনদেনের পরিমাণ এনপিসিআই প্ল্যাটফর্মে হওয়া মোট ইউপিআই পেমেন্টের ত্রিশ শতাংশের বেশি, তা হলে সেই সংস্থা আর নতুন লেনদেন করতে পারবে না, যত দিন না গড় লেনদেনের পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে নামে। স্বভাবতই টিপিএপি-গুলি এই নিয়মের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল। তাদের দাবি ছিল, অন্তত পাঁচ বছরের জন্য সিদ্ধান্তটি স্থগিত রাখা হোক।
এনপিসিআই-এর দুই বছর সময়সীমা পিছানোর সিদ্ধান্তটি স্বাগত। এমন একটি ঊর্ধ্বসীমার কথা ভাবা হয়েছিল কেন, গোড়ায় সেই প্রশ্নটি করা দরকার। যুক্তি ছিল যে, অনলাইন লেনদেনের বাজারে কোনও একটি বা দু’টি সংস্থার একাধিপত্য না থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফোনপে (৪৭.২৬ শতাংশ) এবং গুগল পে (৩৪ শতাংশ) মিলে এ ক্ষেত্রের সিংহভাগ অধিকার করে রয়েছে। স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, ইউপিআই-এর বাজারটি প্রতিযোগিতামূলক। সেই বাজারে কোনও একটি বা দু’টি সংস্থা যদি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে, তা হলে সেটা কি তাদের ব্যবসায়িক কৃতিত্বের পরিচয় নয়? সেই কারণে তাদের শাস্তি দেওয়া কি প্রতিযোগিতার বাজারের ধর্মের বিরোধী নয়? কোনও সংস্থা যদি অন্যায় ভাবে, প্রতিযোগিতার শর্ত উল্লঙ্ঘন করে, বাজার দখল করে, তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যকর্তব্য। কিন্তু সেই কর্তব্যটি কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া-র, এনপিসিআই-এর নয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশে আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়ার বিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এনপিসিআই। তবে, সেই কৃতিত্ব তাদের বাজারের ব্যবস্থাপক থেকে নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার অধিকার দেয় না।
ইউপিআই-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। কিন্তু এখনও এই লেনদেনের ট্রানজ়্যাকশন কস্ট অন্তিম উপভোক্তা বা পণ্য বিক্রয়কারী সংস্থাকে বহন করতে হয় না। ২০২১-২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ইউপিআই এবং রু-পে ডেবিট কার্ডে লেনদেনের খরচ পুষিয়ে দিতে ১৫০০ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ করে। কিন্তু কোনও না কোনও সময়ে এই সরকারি সহায়তা বন্ধ হবে এবং লেনদেনের এই পদ্ধতিটিকে স্বনির্ভর হতে হবে। তা এই টিপিএপি-গুলিতে আরও বিবর্তিত হতে সাহায্য করার পাশাপাশি আয় বাড়ানোরও সুযোগ করে দেবে। এতে আরও নতুন সংস্থা এই ক্ষেত্রে যুক্ত হলে সময়ের সঙ্গে লেনদেনের আয়তন বাড়ার ফলে বাজারে আধিপত্যের সমস্যাটি প্রশমিত হবে। কিন্তু, তত দিন অবধি প্রতিযোগিতার উপর ভরসা হারালে চলবে না।