—প্রতীকী ছবি।
বর্তমানে ব্যবহারিক জীবনে অনলাইন-নির্ভরতা এক বৈপ্লবিক পর্বের সূচনা করেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। শুধুমাত্র খাতায়-কলমে হিসাব রাখার দিন ফুরিয়েছিল বহু আগেই। অতিমারিকালে বিশ্ব দেখল, দৈনন্দিন পঠনপাঠনের ক্ষেত্রেও অনলাইনের বিপুল ব্যবহার আর শুধুই কল্পনা নয়, ঘোর বাস্তব। তাই বৈশ্বিক ক্ষেত্রে তো বটেই, এই রাজ্যেও করোনা-উত্তর সময়ে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে অনলাইন নানাবিধ কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুণ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জুড়ে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলির শিক্ষকদের ধাপে ধাপে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মাইক্রোসফট। আপাতত স্থির হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং দু’জন সহকারী শিক্ষককে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ সাধু। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেমন পাঠ্যসূচিকে নিয়মিত পরিবর্তিত করা প্রয়োজন, বদল আনা প্রয়োজন পরীক্ষাব্যবস্থাতে, ঠিক তেমনই দৈনন্দিন স্কুল পরিচালনার প্রক্রিয়াটিকেও যুগোপযোগী হয়ে উঠতে হবে। এবং এই উত্তরণ কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু শহরাঞ্চলের স্কুলগুলি সেই সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলি অনেকাংশেই সেই দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত। সেখানে কম্পিউটারের ব্যবহার কম, আরও কম এই কাজে দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যা। অথচ, স্কুলগুলিতে বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, বৃত্তি চালু আছে। সেগুলির নিয়মিত এবং যথাযথ হিসাব রাখা, ডেটা এন্ট্রি-সহ বিভিন্ন অনলাইন কাজ সুসম্পন্ন করতে কম্পিউটারে সড়গড় হওয়া আবশ্যক। এই বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যা কম হওয়ায় বাইরে থেকে অর্থের বিনিময়ে লোক নিযুক্ত করা হচ্ছে। টানাটানির সংসারে যা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। আশা, উদ্ভূত সমস্যাগুলিকে এই প্রশিক্ষণ কিছুটা হ্রাস করবে। প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যকর ভাবে শেষ হলে পরবর্তী ধাপে আরও শিক্ষককে এর আওতায় আনা যায় কি না, ভেবে দেখা প্রয়োজন সেটিও।
তবে, রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলি যে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত, সেগুলির সুরাহা না করে অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা কত দূর সফল হবে, সেই কথাটিও বিবেচ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে ইন্টারনেট সংযোগের ভিত্তি এখনও দৃঢ় নয়। করোনাকালে বহু শিক্ষার্থী এর কারণে চিরতরে ছাত্রজীবনে দাঁড়ি টেনে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আশঙ্কা, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা উন্নততর না করে এই প্রশিক্ষণের প্রয়াস সর্বত্র সমান সুফল দেবে না। অন্য দিকে, যেখানে রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির সার্বিক পরিকাঠামোই প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে, সেখানে সর্বাগ্রে পরিকাঠামো উন্নতির প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসা উচিত ছিল। নড়বড়ে কলকব্জা নিয়ে আধুনিকতার পথে কত দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব, সেই কথাও ভাবতে হবে বইকি। তা ছাড়া বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীপিছু শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। তদুপরি অভিযোগ, সরকারি নানা প্রকল্পে ব্যস্ত শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পান না। অনলাইন প্রশিক্ষণ এবং তৎপরবর্তী বিদ্যালয়ের নানা কাজে কম্পিউটার-দক্ষ শিক্ষকদের ব্যবহার শেষাবধি পড়ানোর কাজটিতেই দাঁড়ি টেনে দেবে কি না, সেই প্রশ্নও উপেক্ষা করার নয়।