ছবি: রয়টার্স।
অর্থনীতির বেহাল দশা কী ভাবে সমাজকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, এই মুহূর্তে তার উদাহরণ নাইজিরিয়া। গণ-অপহরণে উত্তাল সে দেশ। সম্প্রতি দেশের উত্তর-পশ্চিমে কাদুনা প্রদেশের একটি প্রাথমিক স্কুল থেকে কয়েক জন শিক্ষক-সহ ২৮৭ জন পড়ুয়াকে অপহরণ করে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। অপহরণের দায় এ-যাবৎ কেউ না নিলেও ঘটনাটি এক দশক পূর্বের সে দেশেরই কুখ্যাত বোকো হারাম-এর গণ-অপহরণের আতঙ্ক উস্কে দিয়েছে। ২০১৪ সালে উত্তর-পূর্ব নাইজিরিয়ার বোর্নো প্রদেশের একটি স্কুল থেকে ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণ করে দুনিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। এর পর থেকেই নাইজিরিয়ার উত্তরাঞ্চল প্রায়শই অস্থির থেকেছে অপহরণ তথা গণ-অপহরণের ঘটনায়। প্রসঙ্গত, স্কুলপড়ুয়াদের অপহরণের কয়েক দিন আগেই বোর্নো প্রদেশে প্রায় দুই-শতাধিক মহিলা ও শিশুকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু-র সরকার এখন তীব্র সমালোচনার মুখে। গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট তিনুবু ক্ষমতায় আসার পরে এ-যাবৎ সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষ অপহৃত হয়েছেন দুষ্কৃতীদের দ্বারা।
তবে এক জন শাসককে দায়ী করে লাভ নেই। পশ্চিম আফ্রিকার এই রাষ্ট্রটির উত্তরাংশে প্রায় দু’দশক ধরে সক্রিয় থেকেছে বোকো হারাম-সহ তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইসোয়াপ)-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। তারাই এত কাল নাগরিকদের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে হিংসা তথা লুটতরাজ, অপহরণ, ধর্ষণ চালিয়ে এসেছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমে গজিয়ে উঠেছে বহু দুষ্কৃতী বাহিনী, যারা সাম্প্রতিক কালে নিজেদের সংগঠিত সশস্ত্র দলে পরিণত করেছে। তাদের বিশেষত্বই হল মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ। শুধু তা-ই নয়, এখানকার কৃষিজমি এবং খনি অঞ্চলগুলিও দখল করে নিচ্ছে তারা। উত্তরাঞ্চলের দুর্গম জনবসতিতে প্রশাসনিক অনুপস্থিতি অপরাধের পথ সুগম করছে। গত এক দশক ধরে অবিরাম সংঘর্ষে জর্জরিত দেশের সামরিক বাহিনী এদের রুখতে কোনও পদক্ষেপই করেনি। সেই সুযোগে অপহরণকে এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে তারা। স্কুলপড়ুয়াদেরই নিশানা করা হয়, যে-হেতু দুষ্কৃতীরা বিলক্ষণ জানে যে, এ-হেন স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগণের চাপে শেষ পর্যন্ত নত হবে প্রশাসন। মুক্তিপণ না মেটানোয় অপহৃতদের হত্যা সে দেশে বিরল নয়। তাই, সরকারের তরফে মুক্তিপণ দেওয়া বেআইনি ঘোষিত হলেও, বহু ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসন এবং অপহৃতদের পরিবার যুগ্ম ভাবে মেটায় পণের অর্থ। এই মুক্তিপণ এবং অন্যান্য বেআইনি আয় দুষ্কৃতীরা অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করে।
দেশের উত্তরে এমন অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধির কারণ স্পষ্টতই অর্থনৈতিক। প্রশাসনিক অকর্মণ্যতার জেরে জনসাধারণের আয় গত এক দশকে নিম্নগামী হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও মূল্যস্ফীতি চলছেই। এমতাবস্থায় তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আয়ের সন্ধানে যোগ দিচ্ছে অপরাধীদের দলে। এ দিকে প্রেসিডেন্ট তিনুবু দুষ্কৃতীদের কাছে নতিস্বীকার না করে কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। বর্তমান প্রশাসন তাদের কার্যকলাপে আমূল পরিবর্তন না আনলে দেশটি আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, আশঙ্কা যথেষ্ট।