—প্রতীকী চিত্র।
ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাতন্ত্র্যে রাশ টানছে কেন্দ্র। সরকারি নির্দেশকে মান্যতা দিতে অনেক পুরস্কার এবং ফেলোশিপ খারিজ করল দু’টি বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি প্রতি বছর বাহাত্তরটি পুরস্কার দিত; ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস, ইন্ডিয়া দিত কুড়িটি। বিজ্ঞানের গবেষণায় উৎকর্ষের স্বীকৃতি দিতে, এবং নবীন গবেষকদের বৃত্তি দিতে এই সব পুরস্কার (অ্যাওয়ার্ড) দেওয়ার প্রথা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরাই। অনেক পুরস্কারের অর্থ বহন করতেন কোনও ব্যক্তি অথবা বেসরকারি সংস্থা, সরকারি কোষ থেকে তা আসত না। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র (ডিএসটি) নির্দেশে এই পুরস্কারগুলি খারিজ করতে বাধ্য হল জাতীয় স্তরের ওই দুই সংস্থা। আবারও কেন্দ্রের এই মনোভাবই প্রকাশ পেল যে, সরকার-পোষিত যে কোনও প্রতিষ্ঠানকে সরকারি শীর্ষকর্তাদের ইচ্ছা মেনে চলতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন অনধিকার প্রবেশ অবশ্যই বিজ্ঞানের অলিন্দে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণারযে কোনও প্রতিষ্ঠান, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চার সঙ্গে সংযুক্ত বিবিধ সংস্থার স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা ক্রমাগত খর্ব করে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নিয়োগ-পর্বে সরকারি হস্তক্ষেপ, পাঠ্যসূচি পরিবর্তন, অনুদানের শর্তে পরিবর্তন— এমন নানা পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীকে সম্মানিত করতে হলেও সরকার-পোষিত বিজ্ঞান সংস্থাগুলিকে সরকারের অনুমোদন চাইতে হবে।
এর ইঙ্গিত অবশ্য গত বছর সেপ্টেম্বরেই মিলেছিল। সংবাদে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের একটি বৈঠক হয়, যেখানে দু’-একটি বাদে অধিকাংশ প্রচলিত ‘অ্যাওয়ার্ড’ (পুরস্কার, স্কলারশিপ, ফেলোশিপ) প্রভৃতি বাতিল করতে বলা হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, পুরস্কার, বৃত্তি প্রভৃতি যা কিছু দিতে চায় প্রতিষ্ঠানগুলি, নতুন করে তার প্রস্তাব তৈরি করে, যথাযথ যুক্তি দর্শিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। মহাকাশ, আণবিক শক্তি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা, সব বিভাগেই বাতিল হয়েছে পুরস্কার। ডিএসটি-র অনুদানপ্রাপ্ত পঁচিশটি বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থাকে পুরস্কার বা বৃত্তি দিতে হলে আগে সরকারি অনুমোদন পেতে হবে।
পুরনো পুরস্কারগুলি বাতিল হলেও কবে, কতগুলি নতুন পুরস্কার ঘোষণা হবে, এখনও জানা যায়নি। তবে আরও অল্প সংখ্যক, আরও উচ্চস্তরের পুরস্কার ঘোষণা করাই সরকারের ইচ্ছা, তা জানানো হয়েছে ওই বৈঠকে। কেন পুরস্কারের সংখ্যা কমানো, বা কেন্দ্রের অনুমোদনের প্রয়োজন, তা অবশ্য জানানো হয়নি। বিজ্ঞান-পুরস্কার দেওয়ার যে রীতি এত দিন প্রচলিত ছিল, তা নিয়ে যে বৈজ্ঞানিক মহলে প্রশ্ন ওঠেনি, এমন নয়। আরও স্বচ্ছ, আরও ন্যায্য পদ্ধতির কথা ভাবা হয়তো দরকার। কিন্তু সে পদ্ধতি কী, তা ঠিক করতে হবে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলিকেই। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী বা আমলাদের কাজ সেটা নয়। বরং বিজ্ঞান গবেষণার আরও সুযোগ তৈরি করা, গবেষকদের বৃত্তির আরও প্রসার করার কাজটি সরকারের। যে কোনও বিষয়ে গবেষণায় উৎকর্ষের প্রথম ধাপ চিন্তার স্বাধীনতা। প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা তার পূর্বশর্ত।