Fire

আগুন নিয়ে খেলা

আগুনের শিখা নির্বাপিত হলে দগ্ধাবশেষের পাশে পড়ে থাকে এক ভয়ঙ্কর সত্য— এই আগুনই শেষ নয়। প্রত্যেক অগ্নিকাণ্ডের পরেই রাজ্যবাসী নিয়ম করে শোনেন সুরক্ষার আশ্বাস।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ ০৬:১২
Share:

আগুন লাগার কারণ সন্ধান করলে প্রথমেই চোখে পড়ে শহর জুড়ে অগ্নিবিধিকে অবজ্ঞা করার অঢেল প্রবণতা। প্রতীকী ছবি।

শহরের অনেক বহুতলেই অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থার হাল যে আশাব্যঞ্জক নয়, তার নানা ছবি প্রায়শই দেখা যায়। সম্প্রতি যেমন চিনার পার্কের একটি আবাসনের একতলায় সোফার গুদাম থেকে আগুন ছড়ানোর ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করল। ওই বহুতলেও কোনও উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এর কিছু দিনের মধ্যেই, নাগেরবাজারের বহুতলে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছতে দমকলকে অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। ঘটনাগুলি উদ্বেগজনক। বস্তুত, শহরের অনেক বহুতল আবাসনই এখনও দমকলের ছাড়পত্র পায়নি। অনেক জায়গাতেই অগ্নিনির্বাপণের মহড়া দমকলের বিধি মেনে হয় না। আগুনের শিখা নির্বাপিত হলে দগ্ধাবশেষের পাশে পড়ে থাকে এক ভয়ঙ্কর সত্য— এই আগুনই শেষ নয়। প্রত্যেক অগ্নিকাণ্ডের পরেই রাজ্যবাসী নিয়ম করে শোনেন সুরক্ষার আশ্বাস। প্রতি বার জানানো হয়, বহুতল এবং বড় দফতর, বাণিজ্যিক ভবনগুলিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নজরদারি হবে; বিধি না মানলে হবে জরিমানা। কিন্তু পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা যায়, এ সব অঙ্গীকারের কোনওটাই পালিত হয়নি।

Advertisement

আগুন লাগার কারণ সন্ধান করলে প্রথমেই চোখে পড়ে শহর জুড়ে অগ্নিবিধিকে অবজ্ঞা করার অঢেল প্রবণতা। যে বহুতলগুলি আগুনের গ্রাসে পড়েছে বা ভবিষ্যতে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের প্রায় সব ক’টিতেই বহু মানুষের বাস, বহু ব্যবসার ঠিকানা। তবুও অগ্নিবিধি পালন করা হয় না কেন? কারণ, অনেক আবাসনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকলেও তার সমাধান বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ করা হয় না। নির্দিষ্ট সময়ে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাটি পরীক্ষা করা বা উন্নত করা হয় না। আবাসন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে দমকলের সঙ্গে মহড়ার ব্যবস্থা করেন না। আবার যে সব আবাসনে ব্যবসায়িক কাজকর্ম হয়, সেখানে হুকিং, খোলা তার, ক্ষমতার বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা অগ্নিকাণ্ডের বিপদ বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে জুড়ে যায় রাজনীতির চক্র। অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে এই চক্রের সম্পর্ক একটি পরিচিত অপরাধ। সব মিলিয়ে, আমাদের দেশ তথা রাজ্যের অদ্ভুত প্রবণতা হল— এখানে নিরাপত্তাবিধি নির্মাণ ‘ন্যূনতম প্রয়োজনীয়’ স্তরের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না।

অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের উদাসীনতা সে শিক্ষার প্রথম পাঠটিও শুরু করেনি। স্টিফেন কোর্ট থেকে আমরি হাসপাতাল, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল থেকে বাগড়ি মার্কেট, নন্দরাম মার্কেট থেকে পূর্ব রেলের সদর দফতর— শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যাটি কম নয়। কিন্তু আগুন লাগবে, কিছু দিন কোলাহল হবে, বিরোধীরা সরব হবেন, তার পর নতুন বিষয়ের ছাইয়ে পুরনো আগুন চাপা পড়ে যাবে— এমনটাই যেন নিয়ম। এখানে নাগরিকদের কথাও উঠে আসে বইকি। যে প্রশাসন নাগরিকের ভালমন্দের বিষয়ে উদাসীন, হুঁশ ফিরিয়ে তাকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা নাগরিক সমাজেরই কাজ। নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে তা করতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার কথাও মনে রাখতে হবে। নতুবা আগামী দিনে আগুনে নাগরিক প্রাণ বা আর্থিক ক্ষতি ঘটলে, তার নৈতিক দায় প্রশাসনের সঙ্গে নাগরিক সমাজের কাঁধেও বর্তাবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement