Ganga Aarti

সন্ধ্যারতি সংবাদ

গঙ্গার ধারেই যে প্রিন্সেপ ঘাট শহরের অন্যতম পর্যটনস্থল, সেই চত্বরও নজরদারির অভাবে অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২০
Share:

দক্ষিণ দমদমে স্থানীয় জলাশয়েই আরতি প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে গঙ্গা-আরতির শুভ সূচনা আসন্ন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গেও গঙ্গা-আরতি শুরু করা হবে। আরতির উপযুক্ত জায়গা সন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সে জায়গা কেমন হওয়া উচিত, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তার খানিক বিবরণও দিয়েছিলেন। এবং দায়িত্ব সমর্পণ করেছিলেন কলকাতা পুরসভার উপর। অতঃপর খোদ মহানাগরিক প্রিন্সেপ ঘাট থেকে শুরু করে জাজেস ঘাট এলাকা পর্যন্ত পরিদর্শন করে এসেছেন। ইতিমধ্যে হুগলির মতো কিছু জেলাতে প্রত্যহ সন্ধ্যায় গঙ্গার তীরে সন্ধ্যারতি শুরু হয়েছে, অথবা প্রস্তুতি চলছে। এবং যে অঞ্চল গঙ্গার দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত, যেমন দক্ষিণ দমদম, সেখানে স্থানীয় জলাশয়েই আরতি প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গা তো বটেই, অতঃপর ছোটখাটো জলাশয়ের ঘাটগুলিতেও আরতির হিড়িক পড়বে কি না।

Advertisement

প্রশ্ন এবং প্রশ্নাভ্যন্তরীণ উদ্বেগটি বুঝতে কষ্ট হয় না। কলকাতার জলাশয়গুলির অবস্থা এমনিতেই অতি মন্দ। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে কয়েক হাজারের মতো পুকুর, জলাশয় বোজানো হয়েছে এই শহরে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রায় নাকের ডগায় নির্বিচারে বোজানো হয়েছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। যে জলাশয় বা পুকুর প্রোমোটারদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে, তার কতগুলির স্বাস্থ্যই বা অটুট রয়েছে? জল কতটা বহমান, এবং পরিষ্কার? অবাধে উঠেছে বেআইনি কংক্রিটের জঙ্গল, নতুন নতুন আবর্জনার স্তূপে নাভিশ্বাস উঠেছে জলাশয়ের। নাগরিক লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আবর্জনা-জর্জরিত জলাশয়। অথচ, পরিবেশ রক্ষায় পুকুর, নদীর মতো জলাশয় এবং তৎসংলগ্ন বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্ব নিশ্চয় প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু এত বছরেও রাজ্য প্রশাসন পুকুরের যথোপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজে মনোযোগী হয়নি। পুকুর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সৌন্দর্যায়নের কথা ভাবলেও পুকুর পরিষ্কার ও সংরক্ষণের কথা ভাবেনি। এমতাবস্থায় পরিবেশকর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে জলাশয়গুলির সংরক্ষণে অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন ছিল, তার পাড়ে পূজার্চনার ব্যবস্থা করা নয়। সর্বোপরি, পূজার্চনার পর পুকুরগুলির দূষণের মাত্রা আরও কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা-ও বিচার্য বইকি। ছটপূজার পর জলাশয়গুলির যে দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি কি এই ক্ষেত্রে হবে না?

কিন্তু রাজনীতি কবেই বা মানুষের বাইরে অন্য কারও কথা গভীর ভাবে ভেবেছে। মানুষ মানেই সম্ভাব্য ভোটদাতা, সুতরাং তাঁদের মনোরঞ্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই হল। এমনিতেই এই রাজ্যের প্রশাসকমণ্ডলী উৎসব পালনে তিলমাত্র কার্পণ্য করে না। তদুপরি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে সন্তুষ্ট রাখার তাগিদটিও উপেক্ষা করা চলে না। সুতরাং যে তৎপরতা সন্ধ্যারতির ঘাট নির্বাচনে পুর কর্তৃপক্ষদের মধ্যে দেখা যায়, তার কণামাত্রও এলাকার জলাশয়গুলিকে রক্ষার কাজে দেখা যায় না। গঙ্গার ধারেই যে প্রিন্সেপ ঘাট শহরের অন্যতম পর্যটনস্থল, সেই চত্বরও নজরদারির অভাবে অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। নিজের সম্পদ সম্পর্কে উদাসীন থেকে অন্যের অনুকরণ করতে ভালবাসে শিশুরা। রাজ্যের পুরসভাগুলি এবং প্রশাসনের শীর্ষমহল এখনও সেই শৈশব কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement