Law Commission

সম্পদ সুরক্ষা

সরকারের সমালোচককে ‘অপরাধী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানো বর্তমান ভারতে একটি ভিন্ন ‘মডেল’ হয়ে উঠেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অতঃপর প্রতিবাদের নামে সরকারি সম্পত্তি ও অন্যান্য জনসম্পদ নষ্ট করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আন্দোলনকারীকে, এই নিয়মকে ন্যায়সংহিতায় স্থান দেওয়ার সুপারিশ করল আইন কমিশন। সম্পদ রক্ষার এই উপায়কে ‘কেরল মডেল’ বলা হয়, কারণ কেরল হাই কোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেরলে আইনে রয়েছে যে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির সমান আর্থিক মূল্য জমা দিলে তবেই অভিযুক্তদের জামিনের আর্জি বিবেচিত হবে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়ে বিতর্ক হলে তার নিষ্পত্তি করবে আদালত। ২০১৯ সালে পাশ-করা একটি আইন ব্যক্তিগত সম্পত্তিকেও সুরক্ষা দিয়ে বলেছে, আন্দোলনের জেরে সম্পত্তি নষ্ট করা হলে তা সারিয়ে দেওয়ার টাকা অভিযুক্তকে দিতে হবে। সরকারি ও ব্যক্তিগত, দু’ধরনের সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেই কেরলের দৃষ্টান্ত অনুসরণের সুপারিশ করেছে আইন কমিশন। ‘কেরল মডেল’-এর মূল ধারণাটিতে আপত্তিকর কিছু নেই। এ দেশে প্রতিবাদ আন্দোলনের নামে উন্মত্ত বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বাস-ট্রেনের উপর আক্রমণ, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পদ ধ্বংস হয়, এবং সে সবের জেরে নাগরিকের প্রাণও বিপন্ন হয়। গণতান্ত্রিক বিরোধিতার সাংবিধানিক পথগুলি পরিহার করে জন-উন্মাদনাকে প্রশ্রয় দেন বিরোধীরা। যদিও প্রায় সব রাজ্যেই এমন উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু নষ্ট সম্পদের ক্ষতিপূরণকে অভিযুক্তের জামিনের শর্ত হিসাবে রাখা হয়নি। ক্ষতিপূরণ না দিলে মুক্তি মিলবে না, এমন বিধি চালু হলে তা প্রতিবাদের নামে নির্বিচার ধ্বংসে রাশ টানতে পারে। তাই ‘কেরল মডেল’-কে কেন্দ্রীয় আইনে পরিণত করায় আপত্তি করা চলে না।

Advertisement

তবে তত্ত্ব আর বাস্তবে ফারাকটিও মাথায় রাখা চাই। ভারতে বিরোধিতার সুযোগ দিন দিন সঙ্কীর্ণ হয়ে উঠছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল তো বটেই, নাগরিক সংগঠনগুলির প্রতিবাদের উপরেও কতখানি মারমুখী হয়ে উঠছে রাষ্ট্র, সিএএ-বিরোধী আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলনের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের দমন-পীড়নেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে দেখা গিয়েছে, নানা মিছিল-অবস্থানের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির পরে সেই সব আন্দোলন আদালতে বৈধ বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। বিধিসম্মত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকেও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। অতএব মূল প্রশ্নটি এই যে, সরকার তথা শাসক দল কী উদ্দেশ্যে আইনকে ব্যবহার করছে? সরকার কি আইনকে ব্যবহার করছে নাগরিককে সুরক্ষা দিতে? না কি নাগরিকের অধিকার খর্ব করতে?

সরকারের সমালোচককে ‘অপরাধী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানো বর্তমান ভারতে একটি ভিন্ন ‘মডেল’ হয়ে উঠেছে। তার অন্যতম দৃষ্টান্ত উত্তরপ্রদেশ, যেখানে ২০২২ সালে শাসক দলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের প্রতিবাদের পরে প্রতিবাদীদের বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সন্ত্রাসবাদের মতো ধারা সহজেই আরোপ করে সমাজকর্মী ও সাংবাদিকদের উপরে। এই পরিস্থিতিতে ‘কেরল মডেল’ নাগরিকের সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, না কি তার ক্ষোভের প্রকাশকে ব্যাহত করবে, সেই প্রশ্নটিও ভাবা চাই। গণতন্ত্রে বাক্‌স্বাধীনতা সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement