প্রতীকী ছবি।
কেবল অক্সিজেন কিংবা ঔষধের অভাব নহে, তথ্যের অভাবও কোভিড-মৃত্যুর কারণ। দেশের দুই শতাধিক বিজ্ঞানী একটি খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সেই কথা মনে করাইয়াছেন। তাঁহাদের দাবি, সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি, তাহার বিস্তারের নকশা বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করিতে হইবে, এবং বিজ্ঞানীদের নিকট তাহা প্রকাশ করিতে হইবে। কারণ, বহু বিষয়ের বিশেষজ্ঞ দ্বারা তথ্যের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ হইলে তবেই সংক্রমণের মোকাবিলার সূত্র মিলিতে পারে। বিজ্ঞানীদের এই কথার সত্যতা লইয়া তর্ক চলে না। গত বৎসরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলিয়াছিল ভারতের দুইটি রাজ্যের আশি হাজারের অধিক সংক্রমিত ব্যক্তি, এবং তাঁহাদের সংস্পর্শে থাকা ছয় লক্ষ মানুষের সমীক্ষা করিয়া। কোভিড-সম্পর্কিত এতাবৎ বৃহত্তম এই সমীক্ষায় জানা গিয়াছিল, অল্পসংখ্যক মানুষ প্রচুর মানুষকে সংক্রমিত করিতেছে, এবং শিশুরা প্রায়ই এমন ‘সুপারস্প্রেডার’ হইয়া থাকে। আরও স্পষ্ট হইয়াছিল যে, হাসপাতালে ভর্তির পর গড়ে ছয় দিনের মাথায় মৃত্যু ঘটিতেছে ভারতে, আমেরিকায় যাহা ১৩ দিন। যাহার অর্থ, ভারতীয়রা বিলম্বে আসিতেছে হাসপাতালে। তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করিয়াছিল আমেরিকার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত, তাই এই মূল্যবান তথ্যগুলি মিলিয়াছিল। সে তথ্যের উপযোগিতা প্রশ্নাতীত।
নূতন করোনাভাইরাস যে হেতু অনেকাংশে অজানা, এবং ঘন ঘন ভোল বদল করিয়া তাহা আক্রমণ করিতেছে, তাই অবিরাম পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ না করিলে তাহার প্রতিরোধ সম্ভব নহে। এই পরিস্থিতিতে কোভিড তথ্য প্রকাশে কেন্দ্রের অনিচ্ছা বিস্ময়কর। বিজ্ঞানীরা আক্ষেপ করিয়াছেন, যত ধরনের তথ্য-পরিসংখ্যান প্রয়োজন, হয় তাহা সংগ্রহ করা হইতেছে না, অথবা প্রকাশ করা হইতেছে না। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে যত মানুষ কোভিড ‘পজ়িটিভ’ হইয়াছেন, তাঁহাদের সকলের তথ্য ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর নিকট সংরক্ষিত। কিন্তু এক কোটি আশি লক্ষের উপর নমুনালব্ধ তথ্য বিজ্ঞানীদের নিকট প্রকাশ করা হয় নাই। এমনকি অন্যান্য সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকেও সেই তথ্য দেখিবার অনুমোদন দেওয়া হয় নাই।
নিয়ন্ত্রণের এই ইচ্ছা কেন? অতিমারি যত দীর্ঘ হইবে, তত প্রাণ লইবে। সত্বর তাহাকে প্রতিহত করিতে হইলে এই বিপুল পরিসংখ্যানের দ্রুত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত চেষ্টাতেই জনস্বাস্থ্য রক্ষা করিবার সূত্র মিলিবে। তথ্যই অতিমারিকে পরাস্ত করিবার ক্ষমতা জুগাইতে পারে ভারতকে। বিজ্ঞানীরা প্রধানত তিন প্রকার তথ্য দাবি করিয়াছেন। সংক্রমণের বিস্তার রুখিতে প্রয়োজন কোভিড পরীক্ষার ফলের তথ্য; মৃত্যুহার কমাইতে প্রয়োজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের তথ্য; এবং টিকার কার্যকারিতা বুঝিতে প্রয়োজন টিকাপ্রাপ্তদের প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিমাপ বিষয়ক তথ্য। বিজ্ঞানীদের এই দাবি ন্যায্য। তথ্য প্রকাশে এই সরকার বরাবরই কৃপণ। প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভুলিয়াছেন, সরকার তথ্যের তত্ত্বাবধায়ক, মালিক নহে। দেশকে সুরক্ষার যে শপথ তিনি লইয়াছিলেন, তাহা এখন পালন করুন। তথ্য তুলিয়া দিন বিজ্ঞানীদের হাতে।