আফগানিস্তান হইতে ১১ সেপ্টেম্বর বাহিনী প্রত্যাহার করা হইবে, ঘোষণা করিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইতিপূর্বে তিন বার সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করিয়াছেন বারাক ওবামা, এবং পশ্চাদপসরণ করিয়াছেন; চার বৎসরে তাহা পারেন নাই ডোনাল্ড ট্রাম্পও, অবশেষে এই বৎসরের মে মাসে তারিখ বাঁধিয়াছিলেন। বাইডেন আরও পিছাইলেন, হয়তো পূর্বসূরিদের অপারগতার কথা ভাবিয়াই। আমেরিকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের একাংশ বাহিনীকে দেশে ফিরাইয়া আনিবার পক্ষে, এই যুদ্ধে আমেরিকার প্রাণ ও অর্থহানি ভিয়েতনাম যুদ্ধকেও ছাপাইয়া গিয়াছে, যুদ্ধ জারি রাখিবার অর্থ ক্ষতি প্রলম্বিত করা। অপর পক্ষের মত, যে যুদ্ধে আমেরিকা এতখানি সমর্পণ করিয়াছে, মাঝপথে সেই রণাঙ্গন ত্যাগ করিলে দীর্ঘ অর্জন নাকচ হইয়া যায়, গুরুত্ব খর্ব হয়। সমগ্র জগতের স্বার্থেই লক্ষ্য সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। শত মতবাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিতর বাইডেনের প্রশাসন শেষাবধি কী করিতে পারে, অপেক্ষা তাহারই।
আফগান প্রশাসন এক্ষণে সঙ্কটাপন্ন। গত কয়েক বৎসরে আরও বেশি অঞ্চল কব্জা করিতে একাধিক হামলা চালাইয়াছে তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। বিশেষজ্ঞদের মত, আপাতত আরও অঞ্চল দখল করিতে তৎপর তালিবান, অস্ত্রের জোরে প্রশাসনকে পরাভূত করিবার ক্ষমতায় তাহারা বিশ্বাসী, শান্তিস্থাপনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। দেশের ভবিষ্যৎকল্পে আয়োজিত সম্মেলনে যোগদানেও তাহারা অস্বীকৃত। ট্রাম্প আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের শর্ত হিসাবে তালিবানদের উপর কিছু আচরণবিধি আরোপের চেষ্টা করিয়াছিলেন, যদিও সেই চেষ্টার সাফল্য লইয়া ঘোর সংশয় ছিল। বাইডেন প্রশাসন শর্ত আরোপের চেষ্টাও করে নাই। এই অবস্থায় আমেরিকান বাহিনী ফিরিয়া গেলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির সম্মুখে সুবিপুল দায়িত্ব উপস্থিত হইবে— জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একা লড়িবার দায়িত্ব। সঙ্কট নাগরিক সমাজের, মেয়েদেরও। তাহাদের আশঙ্কা, আমেরিকার উপস্থিতিতে বহু সংগ্রামে যে অধিকার অর্জন করা গিয়াছিল, সেই সমস্তই কি খোয়া যাইবে? ২০০১-পূর্ব তালিবান জমানায় পোশাকের কারণে প্রকাশ্যে নিগ্রহ বা লাঞ্ছনা নিয়মিত ঘটনা ছিল। আমেরিকা-উত্তর দেশে আফগান নারীদের জীবন পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইবার আশঙ্কা প্রবল।
আশঙ্কার মেঘ ঘনাইয়াছে দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারতেও। জঙ্গিরা ক্ষমতাবৃদ্ধি করিলে ভূ-রাজনীতি পাল্টাইবে, নূতন উদ্যম লাভ করিবে পশ্চিম এশিয়ায় ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীসমূহ। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, আমেরিকা ও ন্যাটোর সেনা ফিরিয়া গেলে পাকিস্তানের আইএসআই-নিয়ন্ত্রণাধীন হক্কানি গোষ্ঠী শূন্যস্থান পূরণে উদ্যোগী হইতে পারে। মাথাচাড়া দিতে পারে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিও। ইহা অপ্রত্যাশিতও বটে। গত মাসে সেনা প্রত্যাহারের আলোচনায় একাধিক শর্তের উল্লেখ করেন আমেরিকার বিদেশ সচিব, যে শর্তে ভারতের শরিক হইবার কথা ছিল। অকস্মাৎ, আলোচনা ব্যতিরেকে একতরফা ঘোষণায় নয়াদিল্লির আফগান নীতি দ্রুত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হইয়াছে। অধুনা মিত্র দেশে তালিবান ক্ষমতায় আসিলে ভারতের সহিত শত্রুতা হইতে পারে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি আছে, অতএব সাউথ ব্লকের আফগান-অঙ্ক নূতন করিয়া কষিতে হইবে।