Unemployment

সিন্ধুতে বিন্দু

২০১৯-এর নির্বাচনের আগে প্রকাশিত হয়েছিল পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে-র রিপোর্ট, যাতে জানা গিয়েছিল যে, ভারতে বেকারত্বের পরিস্থিতি প্রায় অর্ধশতকের মধ্যে ভয়াবহতম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রোজগার মেলার নামে প্রধানমন্ত্রী আসলে নাটক করছেন কি না, বিরোধীপক্ষের এই প্রশ্নটি অপ্রয়োজনীয়। লোকসভা নির্বাচন সমাসন্ন, এমন অবস্থায় ‘মেলা’-র আয়োজন করে রাজ-ভঙ্গিমায় প্রধানমন্ত্রী চাকরির চিঠি বিলি করলে তার একটিই অর্থ হওয়া সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে যে, সেই চিঠি পাওয়ার পরও চাকরি জোটেনি; বহু ক্ষেত্রে পদোন্নতিকেও ‘নতুন চাকরিতে নিয়োগ’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। দশ লক্ষ চাকরির ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটনা ঘটবে, তা স্বাভাবিক— হিন্দি সিনেমার ভাষা ধার করলে বলতে হয়, বড় বড় দেশে এমন ছোট ছোট কথা ইত্যাদি। এগুলির কোনওটিই আসল প্রশ্ন নয়। মূল প্রশ্ন হল, এই রোজগার মেলার মাধ্যমে কি ভারতের কর্মসংস্থানহীনতার সমস্যাটির সমাধান সম্ভব? বৃহত্তর প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে নীতি অনুসরণ করে অর্থব্যবস্থা পরিচালনা করে, তা কি আদৌ কর্মসংস্থানহীনতার সমাধান করতে পারে? কিন্তু তারও আগে প্রশ্ন হল, বেকারত্বের সমস্যাটি কতখানি গভীর? ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে শ্রীমোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের— দশ বছরে অন্তত দশ কোটি নতুন চাকরি হওয়ার কথা ছিল। সেখানে দশ বছরের মাথায় মূলত বিভিন্ন খালি পদে (অর্থাৎ, প্রতিশ্রুতিমাফিক নতুন কর্মসংস্থান নয়) কর্মী নিয়োগ করে মুখরক্ষার চেষ্টা করতে হচ্ছে, শুধু এটুকুই বলে দেয় যে, সমস্যা কতখানি বিপুল। বিভিন্ন অর্থশাস্ত্রীর হিসাব অনুসারে, এই মুহূর্তে ভারতে দু’কোটি থেকে কুড়ি কোটি নতুন কাজ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। রোজগার মেলায় জাদুকর টুপির ভিতর থেকে যে ইঁদুরটি বার করছেন, তা সেই সংখ্যার তুলনায় সিন্ধুতে বিন্দুমাত্র। এতে ভোটের বাজারে প্রধানমন্ত্রীর কতখানি সুবিধা হবে, সে প্রশ্ন ভিন্ন— দেশের বিশেষ উপকার হবে না।

Advertisement

২০১৯-এর নির্বাচনের আগে প্রকাশিত হয়েছিল পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে-র রিপোর্ট, যাতে জানা গিয়েছিল যে, ভারতে বেকারত্বের পরিস্থিতি প্রায় অর্ধশতকের মধ্যে ভয়াবহতম। গবেষকরা হিসাব কষে দেখিয়েছিলেন, ২০১২ থেকে ২০১৮, এই ছ’বছরে ভারতে মোট কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ৯০ লক্ষ— স্বাধীন দেশের ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। অর্থাৎ, বেকারত্বের দায়টিকে অতিমারির ঘাড়ে চাপানোর উপায় নেই, সেই দায় স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন ভাবে সরকারের। অতিমারি সঙ্কটটিকে তীব্রতর করেছে, বেতন বৃদ্ধির গতি অতি শ্লথ হয়েছে, কাজের বাজার থেকে মেয়েদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এবং, বেড়েছে ‘স্বনিযুক্ত’ কর্মীর সংখ্যা— ভারতের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্র-নির্ভর অর্থব্যবস্থায় যা এক পরিচিত বিপদসঙ্কেত। ভারতে এখন কর্মক্ষম যুবক-যুবতীর সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক, যে ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চমুখ। বেকারত্বের হারও তাঁদের মধ্যেই সর্বাধিক, প্রতি চার জনে এক জন। দশ লক্ষ সরকারি শূন্যপদ পূরণ করে কি এই সমস্যার সমাধান হয়?

ভারতের জিডিপি-র বৃদ্ধির ‘উজ্জ্বল’ হারের সঙ্গে বেকারত্বের এই ছবিটির এমন তীব্র বৈপরীত্য কেন? কারণ, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি বহুলাংশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুঁজিনিবিড় পরিষেবা ক্ষেত্রের উপর। ফলে, ভারতে যে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটেছে, কাঠামোগত ভাবেই তা সুষম হয়নি। চিন-সহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটেছিল মূলত শিল্পক্ষেত্রের বিস্তারের পথে। সেই বৃদ্ধি শ্রমনিবিড়, ফলে তাতে কর্মসংস্থানও ঘটেছে। পাশাপাশি, মোদী সরকারের আমলে শিল্পক্ষেত্রে গৃহীত দু’টি বড় নীতি— মেক ইন ইন্ডিয়া এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম— পুঁজিনিবিড় শিল্পের উপরে জোর দিয়েছে। ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার ছলে মুখ ফিরিয়েছে রফতানির বাজার থেকে। বেকারত্বের পরিসংখ্যান সেই সিদ্ধান্তগুলির মাসুল গুনছে। মেলা বা মহাযজ্ঞ, কিছুরই সাধ্য নেই যে, এই বিপদ থেকে ভারতকে উদ্ধার করে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement