ঢেউয়ের অপেক্ষা

সুতরাং, ভারতেও যে কোনও সময় বহুচর্চিত দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা মারিবে, তাহা প্রত্যাশিত ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাময়িক স্বস্তিটুকু উধাও হইবার পথে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হইতেছে করোনা সংক্রমণের রেখাচিত্র। ইহা নূতন স্ট্রেন, না কি দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবির্ভাব, তাহা বিশেষজ্ঞরা বলিবেন। কিন্তু পরিস্থিতি যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক, সন্দেহ নাই। সম্প্রতি সংক্রমণ বৃদ্ধি লইয়া কেন্দ্র সতর্ক করিয়াছে রাজ্যগুলিকে। কোথায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইতেছে, দৈনিক ভিত্তিতে তাহা দেখিবার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর এবং ছত্তীসগঢ়ের যে সমস্ত জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইয়াছে, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণের গতি বৃদ্ধির কথা বলা হইয়াছে চিঠি পাঠাইয়া। অর্থাৎ, অবস্থা গুরুতর।

Advertisement

প্রশ্ন হইল, টনক নড়িতে এত বিলম্ব হইল কেন? বিদেশের উদাহরণ কি কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট যথেষ্ট বলিয়া প্রতিপন্ন হয় নাই? ব্রিটেন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে এক সময় আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে তলানিতে নামিয়া যাইবার পর আচমকা তাহা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। আমেরিকাতেও অনুরূপ চিত্র। সুতরাং, ভারতেও যে কোনও সময় বহুচর্চিত দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা মারিবে, তাহা প্রত্যাশিত ছিল। তথাপি, গত নভেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ‘করোনার ধার কমিতেছে’ বলিবার পর যে সবিশেষ ঢিলাঢালা ভাব দেখা গেল সর্বস্তরে, তাহাতে চমৎকৃত হইতে হয়। নিঃসন্দেহে নাগরিকদের বেপরোয়া মনোভাব সংক্রমণ বিস্তারে সুবিধা করিয়া দিয়াছে। কিন্তু প্রশাসন কি শুধুমাত্র নাগরিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করিয়া গত তিন মাস অতিবাহিত করিয়াছে? মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে হুঁশিয়ারি দিয়াছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না-আসিলে অচিরেই রাজ্য লকডাউনের পথে হাঁটিবে। মুম্বইয়ে মাস্ক না পরিলে কঠোর জরিমানার মুখে পড়িতে হইতেছে। এই কঠোরতা গোটা দেশে আগাগোড়া বজায় থাকিলে হয়তো লকডাউনের হুঁশিয়ারির প্রয়োজন পড়িত না। কঠোরতা তো বজায় থাকেই নাই, উপরন্তু ভ্যাকসিন আসিবার পর কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের আচরণে বোধ হইয়াছে, করোনা যুদ্ধে ভারতের জয় যেন সুসম্পন্ন। অথচ, বেশ কিছু রাজ্যে টিকাকরণের হার আদৌ আশানুরূপ নহে। টিকা পড়িয়া থাকিতেছে, লইবার লোক নাই, অমূল্য সময় বহিয়া যাইতেছে। টিকা কবে, কে পাইবেন, সেই সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিটি এখনও স্পষ্ট নহে। অতঃপর সংক্রমণ বৃদ্ধি শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ছিল।

পশ্চিমবঙ্গও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসিয়া। যে কোনও মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটিবে। ইতিমধ্যেই জেলাস্তরে খুব ধীরে হইলেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইতেছে। এবং পূর্বের ন্যায় প্রশাসনিক সতর্কতা উধাও। যাবতীয় মনোযোগ আপাতত আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নিবদ্ধ। করোনা পরীক্ষার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়াছে, কমিয়াছে প্রচারও। নির্বাচন উপলক্ষে জনসভা, মিছিল সবই চলিতেছে পূর্ববৎ। মাস্কহীন ভিড়ও চোখে পড়িতেছে। লকডাউনে রাস্তায় পা রাখিলেই পুলিশ লাঠ্যৌষধি প্রয়োগ করিয়াছিল, এখন সম্পূর্ণ নির্বিকার। এই দুইয়ের মধ্যবর্তী পন্থাটি কি অধিক কাম্য ছিল না? সংক্রমণের প্রথম পর্যায়েও মহারাষ্ট্র, কেরলের পরেই এই রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি হইয়াছিল। এই বারও কি প্রশাসন হইতে সাধারণ নাগরিক— সকলেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement