Green Hydrogen

সবুজ প্রতিশ্রুতি

বিশ্ব জুড়ে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি এখনও প্রাক্-প্রথমিক স্তরে থাকলেও এই প্রকল্পে ভারত যোগ দিচ্ছে দ্রুত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:০১
Share:

বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে বটে, কিন্তু চার্জিং-এর বিষয়টি এখনও সহজলভ্য নয়। প্রতীকী ছবি।

উষ্ণায়ন ও পরিবেশের উপরে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বহু দিন ধরেই বিশ্ব জুড়ে খোঁজ চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির ‘উপযুক্ত’ বিকল্পের। সৌরশক্তি এবং বায়ুশক্তি ইতিমধ্যে প্রচলিত হলেও, ক্ষেত্রবিশেষে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় এদের অনিয়মিত প্রাপ্তি এবং ঋতু-নির্ভরতা। পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পেরিয়ে গিয়েছে কয়েক দশক। যদিও তা ব্যয়বহুল। বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে বটে, কিন্তু চার্জিং-এর বিষয়টি এখনও সহজলভ্য নয়। এমতাবস্থায় দেশের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎসের ব্যবহার বাড়াতে গত বছর স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন’-এর কথা ঘোষণা করেন, যার অন্যতম উদ্দেশ্য গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন। সেই সূত্রেই সম্প্রতি ১৭,৯৪০ কোটি টাকার ‘ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন’ (এনজিএইচ) প্রকল্পে সায় দিল কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য, জ্বালানি হাইড্রোজেন উৎপন্ন করার জন্য যে প্রযুক্তি প্রয়োজন, দেশেই তার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা।

Advertisement

হাইড্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প জ্বালানি। সত্তরের দশকে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রথম জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প রূপে মানুষকে পরিস্রুত জ্বালানির উৎস হিসাবে হাইড্রোজেনের কথা ভাবতে বাধ্য করে। উৎস এবং প্রক্রিয়ার বিচারে বিভিন্ন রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয় হাইড্রোজেনকে। যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেনকে বলা হয় ‘গ্রে হাইড্রোজেন’। বর্তমানে এই ধরনের হাইড্রোজেনই সর্বাধিক উৎপন্ন হয়। অন্য দিকে, প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেনকে ‘ব্লু হাইড্রোজেন’ বলে। আর, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি (সৌর বা বায়ু) ব্যবহার করে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়, তাকে বলা হয় ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’। এখন গ্রিন হাইড্রোজেনকেই ভবিষ্যতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসাবে গণ্য করা যায়। প্রসঙ্গত, ভারতের এনজিএইচ প্রকল্পে পাওয়া যাবে বেশ কিছু সুবিধাও। যেমন, গ্রিন হাইড্রোজেন এবং তার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র রফতানির সুযোগ বাড়বে। শিল্প, শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রের কার্বন উৎপাদন ও নিঃসরণ হ্রাস পাবে। কমবে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভরতাও। আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে। যদিও গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি এখনও ব্যয়বহুল, তবে মনে রাখা দরকার যে, সৌরশক্তি এক সময় ব্যয়সাপেক্ষ হলেও গত কয়েক বছরে প্রযুক্তির উন্নতি এবং বিভিন্ন দেশে চাহিদার কারণে সোলার ফোটোভোল্টাইক সেল-এর দাম আশি থেকে নব্বই শতাংশ কমে যায়। এই মূল্যহ্রাসের পরেই দেরিতে হলেও ভারত সৌরশক্তি বিপ্লবে যোগ দিয়েছিল।

বিশ্ব জুড়ে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি এখনও প্রাক্-প্রথমিক স্তরে থাকলেও এই প্রকল্পে ভারত যোগ দিচ্ছে দ্রুত। আশার কথা, প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগই ব্যয় করা হবে দেশীয় পদ্ধতিতে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরে। জোর দেওয়া হবে এমন প্রযুক্তি তৈরির গবেষণা ও উন্নয়নের উপরে, যা বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। প্রকল্পটি সফল হলে জলবায়ু বাঁচানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকাটি পালন করতে সফল হবে ভারত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement