Government Projects in West Bengal

অভাব

২০২১-২৩ সালে রাজ্য পেয়েছে আরও প্রায় হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য প্রকল্পের বরাদ্দও অনেকটাই এখনও ব্যয় হয়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৮
Share:

পানীয় জল, নিকাশি এবং শৌচাগারের অভাব রাজ্যের সর্বত্র নাগরিকের হয়রানি ও অস্বাস্থ্যের কারণ। প্রতীকী ছবি।

উন্নয়নের টাকা পড়ে রয়েছে, অথচ তৈরি নেই উন্নয়নের প্রকল্প, এই ভয়ানক ও করুণ চিত্র উঠে এল সংবাদে। পানীয় জল, বর্জ্য নিকাশি, শৌচাগার নির্মাণে খরচের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে (টায়েড ফান্ড) অর্থ কমিশনের টাকা, সেই সঙ্গে বরাদ্দ হয়েছে জলজীবন মিশন এবং স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের টাকাও। সংবাদে প্রকাশ, অর্থ কমিশনের থেকে ইতিপূর্বে পাওয়া প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এখনও খরচ হয়নি। ২০২১-২৩ সালে রাজ্য পেয়েছে আরও প্রায় হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য প্রকল্পের বরাদ্দও অনেকটাই এখনও ব্যয় হয়নি। এ তথ্য একই সঙ্গে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করতে বাধ্য। রাজ্যের কিছু আধিকারিক কারণ দর্শিয়েছেন, একই খাতে খরচের জন্য নানা তহবিলে টাকা আসছে। একই জায়গায় পানীয় জল বা নিকাশির কত প্রকল্প করা সম্ভব? এ যুক্তি একান্ত অসার— রাজ্যে এমন একটিও ব্লক বা মহকুমা কি সরকার দেখাতে পারবে, যেখানে এই চাহিদাগুলি পূর্ণ হয়ে গিয়েছে? বরং উল্টোটাই সত্য। পানীয় জল, নিকাশি এবং শৌচাগারের অভাব রাজ্যের সর্বত্র নাগরিকের হয়রানি ও অস্বাস্থ্যের কারণ। বিভিন্ন খাতের টাকা নিয়েও বিড়ম্বনার কোনও কারণ নেই। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কাজে লাগিয়ে একটি এলাকার সার্বিক উন্নতি ঘটানো গিয়েছে, এমন উদাহরণ এ রাজ্যে কম নয়। সুসংহত পরিকল্পনার মাধ্যমে কী ভাবে জল সংরক্ষণ, বনসৃজন, কর্মনিযুক্তি বেড়েছে, পানীয় জলের অভাব মিটেছে, শৌচাগারের ব্যবহার বেড়েছে, তার বহু দৃষ্টান্ত পশ্চিমবঙ্গের নানা পঞ্চায়েতে চোখে পড়বে।

Advertisement

কেন্দ্রের দেওয়া উন্নয়নের টাকা পড়ে থাকছে কেন, এই প্রশ্নের উত্তর ধৈর্য নিয়ে খোঁজা প্রয়োজন। একটি উত্তর অবশ্য চটজলদি মেলে— রাজ্যের অর্থাভাব। যে কোনও প্রকল্পেই কেন্দ্রের বরাদ্দ দাবি করতে হলে রাজ্যকেও দিতে হয় সমপরিমাণ, অথবা কোনও একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে টাকা। এই ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দেওয়ার অপারগতা, অথবা অনিচ্ছার জন্য রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ফেলে রেখেছে, এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই অনিচ্ছার কারণ কেবলই অর্থাভাব, না কি রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান, সেই প্রশ্নও উঠবে। তৃণমূল সরকার বার বার কেন্দ্রের নানা প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যান করেছে, অথবা সেগুলিকে কেবলমাত্র রাজ্যের প্রকল্প বলে প্রচার করেছে। সেই বার্তা প্রশাসনের নীচের স্তরেও পৌঁছেছে। ফলে কেন্দ্রের প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা তৈরি করার কুশলতা যদি বা আধিকারিকদের থাকে, উৎসাহের অভাব দেখা দিয়ে থাকতে পারে। সেই সঙ্গে রয়েছে লোকবলের ঘাটতি— জেলা ও মহকুমা স্তরে বিভিন্ন দফতরের পুরো সময়ের কর্মীদের অভাব যথেষ্ট। যাঁরা আছেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের বিবিধ বিতরণমূলক প্রকল্প, ‘দুয়ারে সরকার’ প্রভৃতি বিশেষ কর্মসূচিতে নিয়ত ব্যস্ত। নানা দফতরের সঙ্গে কথা বলে, গ্রামের মানুষের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করে সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণের সময় বা তাগিদে টান পড়া আশ্চর্য নয়।

সমস্যা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবেও। যে কোনও বিকেন্দ্রিত প্রকল্পের মূ্ল্যায়নের সময়ে কেন্দ্রের আধিকারিকরা কখন, কোন খুঁটিনাটি তথ্য বা হিসাব তলব করে টাকা আটকে দেবেন, কোন সিদ্ধান্তকে খারিজ করে খরচ-হওয়া টাকা ফেরত চাইবেন, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন জেলা স্তরের আধিকারিকরাও। ফলে কোনও নতুন উদ্যোগের ঝুঁকি তাঁরা সহজে নিতে চান না। সর্বোপরি রয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি হয় প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে, কিন্তু তার ভিত্তি হল আস্থা। প্রশাসনিক আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি এবং গ্রামবাসীর মধ্যে মত-বিনিময়ের রাস্তাটুকু অন্তত খোলা থাকতে হবে। গ্রামাঞ্চলে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়ত সংঘাত, হিংস্র আক্রমণ তা রুদ্ধ করছে। প্রবেশের পথ পাচ্ছে না উন্নয়নের প্রকল্প।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement