Scott Morrison

সংবাদের মূল্য

মনকি অস্ট্রেলিয়াতে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার বন্ধ করিয়া দিবার হুমকিও দিয়াছে, যাহা অভূতপূর্ব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩১
Share:

—ছবি সংগৃহীত

গণতন্ত্রে সংবাদের মূল্য অপরিসীম। কিন্তু সংবাদ প্রস্তুত করিতে অর্থের প্রয়োজন। তাহার দায় বহিবে কে? গুগল, ফেসবুক প্রভৃতি বৃহৎ ডিজিটাল প্রযুক্তি সংস্থা অবশেষে সেই দায় স্বীকার করিতে বাধ্য হইল। অস্ট্রেলিয়ার সরকার ঘোষণা করিয়াছে, গুগল বা ফেসবুকে কোনও সংবাদ, বা সংবাদের অংশ, পরিবেশন করিতে হইলে তাহার মূল্য দিতে হইবে সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে। এই বিধি এ বৎসর আইনে পরিণত হইলে গুগল, ফেসবুক প্রভৃতি আর বিনামূল্যে বা সামান্য মূল্যে কোনও সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের সংবাদ ব্যবহার করিতে পারিবে না। সংবাদ-উৎপাদক সংস্থার সহিত দরাদরি করিয়া সংবাদের মূল্য নির্ধারণ করিতে হইবে, এবং তাহা চুকাইতে হইবে। এমন আইন অন্যান্য দেশের নিকট ‘দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করিবে, সেই আশঙ্কায় গুগল তাহার বিরোধিতা করিয়াছে। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার বন্ধ করিয়া দিবার হুমকিও দিয়াছে, যাহা অভূতপূর্ব। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এমন ভীতিপ্রদর্শনে বিচলিত হন নাই। তিনি স্পষ্ট জানাইয়াছেন, অস্ট্রেলিয়ায় কী নিয়মে বহুজাতিক সংস্থাগুলি কাজ করিবে, তাহা অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট স্থির করিবে। সংবাদ শিল্পের আর্থিক শক্তির ক্ষয় রোধ করা সরকারের কর্তব্য, কারণ শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রে একান্ত আবশ্যক। অতএব সংবাদের যথাযথ মূল্য দিতে হইবে ডিজিটাল প্রযুক্তি সংস্থাকে। ইতিপূর্বে ফ্রান্সও এমনই অবস্থান লইয়াছে। অতঃপর গুগল বিভিন্ন ফরাসি সংবাদ প্রতিষ্ঠান হইতে ‘লাইসেন্স’ পাইবার প্রক্রিয়া শুরু করিয়াছে। কপিরাইট বিধিকে আইনে পরিণত করিবার পথেও হাঁটিতেছে ফ্রান্স। ইউরোপের অন্য দেশগুলিও ফ্রান্সকে অনুসরণ করিতে পারে।

Advertisement

ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার এই অবস্থানকে সমর্থন ও সাধুবাদ জানাইতে হয়। সংবাদ শিল্পের ধমনীর রক্ত তাহার বিজ্ঞাপন। যে সংবাদ সংস্থার পাঠক-দর্শক যত বাড়িবে, বিজ্ঞাপন হইতে তাহার আয়ও তত বাড়িবে, এবং প্রতিষ্ঠান আরও অধিক বিনিয়োগ করিবে উৎকৃষ্ট সংবাদ প্রস্তুত করিতে— এই স্পষ্ট হিসাবে সংবাদ শিল্প পরিচালিত হইত। ডিজিটাল প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উত্থান সেই হিসাব গুলাইয়া দিয়াছে। তাহারা অন্যের দ্বারা প্রস্তুত সংবাদ বিনামূল্যে, বা যৎসামান্য মূল্যে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করে। অথচ, ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসার দ্রুত বাড়িয়াছে, তাই বিজ্ঞাপনও আকর্ষণ করিতেছে। অস্ট্রেলিয়াতে বিজ্ঞাপন হইতে প্রাপ্ত প্রতি একশো ডলারের একাশি ডলার পাইতেছে গুগল এবং ফেসবুক। আমেরিকাতে অপর সকল সংবাদ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল বিজ্ঞাপন হইতে এক বৎসরে যত আয় করে, একা গুগল তাহার সমান আয় করে। অথচ সংবাদ উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞাপনের অর্থের ভাগ দিতে অতিশয় কার্পণ্য দেখাইয়াছে গুগল, ফেসবুক প্রভৃতি সংস্থা।

তাহার ফল ফলিয়াছে গত দশ বৎসরে। বিশ্বের প্রায় সব দেশে বহু সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল বিজ্ঞাপনের অভাবে বন্ধ হইয়াছে। অগণিত সাংবাদিক কাজ হারাইয়াছেন। উৎকৃষ্ট সংবাদ প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ কমিয়াছে, ক্ষয় হইতেছে গণতন্ত্রের। আজ সংবাদের প্রতি ডিজিটাল সংস্থাগুলিকে দায়বদ্ধ করিবার কর্তব্য বর্তাইয়াছে নির্বাচিত সরকারগুলির উপরে। আক্ষেপ, আইনের তর্জন না শুনিলে গুগল, ফেসবুকের মতো সংস্থা তাহার নৈতিক দায় এড়াইয়া যায়। ভারতেও এমন আইন প্রয়োজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement