Higher education

সাধ ও সাধ্য

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গ্রামীণ ভারতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মধ্যেই ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা সমান ভাবে প্রবল, বরং মেয়েরা ছেলেদের থেকে ইচ্ছায় এগিয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ইচ্ছা থাকলেই আজকের ভারতে উপায় হচ্ছে না। অন্তত শিক্ষাক্ষেত্রে যে একেবারেই নয়, এক-একটি সমীক্ষা তা বুঝিয়ে দিচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের ২০২০-২১ সালের সমীক্ষা অবশ্য সরকারের মুখে চওড়া হাসি ফোটাতে পারে, তাতে দেখা যাচ্ছে উচ্চশিক্ষায় দেশের তরুণ প্রজন্মের যোগদান বা ‘এনরোলমেন্ট’ এই প্রথম চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে, তন্মধ্যে ছাত্রীদের যোগদান ছুঁয়েছে দু’কোটি। কিন্তু নাম লেখানোই কি শেষ কথা, বা সমগ্রকথা? ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ কোনও পাঠক্রম নিয়ে পড়ার ‘ইচ্ছা’ একটা বড় ব্যাপার; পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর বা তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামের কোন ছেলে বা মেয়েটি কী পড়তে চেয়েছিল আর কী পড়তে বাধ্য হল, সরকারি সমীক্ষা সর্বদা তার খোঁজ রাখে না। সেই বাস্তব চিত্রই দেখাল ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট’ (এএসইআর) নামে অন্য একটি সমীক্ষা-ফল। তাদের সদ্যপ্রকাশিত রিপোর্টে ভারতে, বিশেষত গ্রামীণ ভারতে ছাত্রছাত্রীদের সাধ ও সাধ্যের ক্রমবর্ধমান ফারাকটি স্পষ্ট।

Advertisement

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গ্রামীণ ভারতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মধ্যেই ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা সমান ভাবে প্রবল, বরং মেয়েরা ছেলেদের থেকে ইচ্ছায় এগিয়ে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে পাঠক্রম বেছে নেওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে— বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এঞ্জিনিয়ারিং ও গণিত (এসটিইএম) সংক্রান্ত কোর্স বেশি নিচ্ছে ছেলেরা, মেয়েরা ঝুঁকছে আর্টস ও হিউম্যানিটিজ়-এর দিকে। ২৬টি রাজ্যের ২৮টি জেলার গ্রামাঞ্চলে, ১৪-১৮ বছর বয়সসীমার মোট ৩৪,৭৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছেছিলেন সমীক্ষাকারীরা, দেখা গিয়েছে ছেলেদের মধ্যে ৩৬ শতাংশেরও বেশি বিজ্ঞান পাঠক্রমে নাম লিখিয়েছে, মেয়েদের মধ্যে মাত্র ২৮%। সামগ্রিক ভাবে ওই বয়সসীমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞানের চেয়ে কলাবিদ্যায় নাম লেখানো ও পড়ার প্রবণতাই বেশি, তবু কার্যকালে গ্রামীণ ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে এই তফাতটি চোখে পড়ার মতো।

ভাববার মতোও নয় কি? যে কোনও সমীক্ষাই কোনও পরিস্থিতি বা প্রবণতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয় মাত্র, সমাধান তার কাজ নয়। সেই কাজ সরকারের, যাঁরা দেশ চালান তাঁদের। সমীক্ষার প্রয়োগকৌশলেরও রকমফের আছে, এএসইআর সমীক্ষাটি স্কুলভিত্তিক নয়, বাড়িভিত্তিক সমীক্ষা। তাতে কোনও একটি বাড়িতে যতগুলি শিশু আছে তাদের সকলের পড়াশোনা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়: সরকারি, বেসরকারি, ধর্মীয় বা অন্য রীতির— কোন ছেলে বা মেয়েটি কোন ধরনের স্কুলে পড়ে; কে কখনওই স্কুলে যায়নি, বা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে; পরীক্ষা বা মূল্যায়নের দিন কোন ছাত্র বা ছাত্রীটি ইস্কুলে নেই, জানা যায় সবই। জাতীয় শিক্ষানীতি, ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমস’ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বাগাড়ম্বর ইদানীং নিয়মে পর্যবসিত, নীতি নিয়ামকেরাও নির্দেশ দিয়েই খালাস, কিন্তু ভারতের প্রান্ত ও প্রত্যন্তের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার আসল ছবিটি চোখের সামনে ফুটে উঠছে এই রকম এক-একটি সমীক্ষার ফল থেকে। সেই ছবি স্বস্তির নয়, সুখের তো নয়ই— কারণ দেশ যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরা সমস্যার গভীরে যাওয়া দূরস্থান, সমস্যাটাই স্বীকার করছেন না। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে নাম লেখানোই এঁদের কাছে দুর্দান্ত সরকারি সাফল্য; তার পরে বা সমান্তরালে কী কী ঘটে গেল, কী আসে যায় তাতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement