Amit Shah

দমন অভিমুখে

করুণ কৌতুক এই যে, অমিত শাহ নতুন ফৌজদারি আইনগুলি পেশ করে সংসদে বলেছিলেন, আধুনিক ভারতে ঔপনিবেশিক আইনের কোনও স্থান নেই বলেই এই পরিবর্তন করা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

— ফাইল চিত্র।

নতুন তিনটি ফৌজদারি আইন বলবৎ করলে পুলিশের হাতে অপরিমিত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে, আশঙ্কা করছেন আইনজীবীদের একাংশ। সংসদে আইনগুলি পাশ হওয়ার পর থেকেই সেগুলি পুনর্বিবেচনার দাবি উঠতে শুরু করেছিল। তা সত্ত্বেও পয়লা জুলাই নয়া তিনটি আইন কার্যকর করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। অথচ, শতাধিক বছর ধরে প্রচলিত আইনগুলির সঙ্গে নতুন তিনটি আইনের তফাত কোথায়, কী কী বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে, সে বিষয়ে আইনজীবীদের মধ্যেও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লি বার কাউন্সিলের কিছু সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানালেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম, এই নতুন তিনটি আইন দমনমূলক হয়ে উঠতে পারে। যে সমস্যাগুলির প্রতি তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধি— পনেরো দিন থেকে নব্বই দিন। কেন প্রাথমিক তদন্ত পুলিশ পনেরো দিনে সম্পূর্ণ করতে পারবে না, আরও ছ’গুণ বেশি সময় লাগবে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি। এক জন নাগরিককে এত দিন বিনা বিচারে পুলিশ হাজতে বন্দি রাখা কি মৌলিক অধিকার তথা নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন নয়? ভারতে পুলিশ-হাজতে বন্দিদের সঙ্গে কী ব্যবহার করে, জেরা করার নাম করে কতখানি নির্যাতন চালানো হয়, তা অজানা নয়। মানবাধিকার কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২০-২২ সালে নানা কারণে ২৭৮টি মৃত্যু ঘটেছে পুলিশ হেফাজতে। সর্বোপরি, কোনও নাগরিকের তিন মাসের বন্দিদশা বস্তুত অপরাধ প্রমাণের আগেই শাস্তি দানের শামিল।

Advertisement

এই ধারাগুলি আইনে রাখা সঙ্গত কি না, আইন পাশ হওয়ার আগে তার আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার মতো, ভারতে আইন পাশ করার পর বিতর্ক শুরু করাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিপরীত গতির কৃতিত্ব কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। আলোচনার সুযোগ না দিয়েই আইন পাশ করানোয় তাদের কুশলতা তর্কাতীত। সংসদে যখন তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন পাশ হয়, তখন সংসদে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য ১৪৩ জন সাংসদ সাসপেন্ড ছিলেন। ফলে, প্রায় বিনাপ্রশ্নে পাশ হয়েছে আইন তিনটি। সংসদের অবরুদ্ধ বিতর্ক পর্যবসিত হচ্ছে রাস্তার বিক্ষোভে। কৃষি আইনগুলির বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন তা দেখিয়েছে। ফৌজদারি আইনগুলির বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমেছেন ট্রাকচালকরা, গাড়ি-দুর্ঘটনায় কঠোর শাস্তির প্রতিবাদে।

করুণ কৌতুক এই যে, অমিত শাহ নতুন ফৌজদারি আইনগুলি পেশ করে সংসদে বলেছিলেন, আধুনিক ভারতে ঔপনিবেশিক আইনের কোনও স্থান নেই বলেই এই পরিবর্তন করা হয়েছে। কাজের বেলা দেখা যাচ্ছে, এই আইনগুলি নানা ভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। যেমন, বেশ কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকে হাতকড়ার ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮০ সালের একটি মামলায় রায় দিয়েছিল যে, হাতকড়ার ব্যবহার অমানবিক, অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক। সেখান থেকে সরে গিয়ে আদালতের অনুমোদন ছাড়াই পুলিশকে হাতকড়া লাগানোর ক্ষমতা দেওয়াকে দিল্লি বার কাউন্সিলের পত্রলেখক সদস্যরা ‘আইনি অত্যাচার’ বলে অভিহিত করেছেন। ওই একই রায়ে শীর্ষ আদালত একক বন্দিত্বকে (সলিটারি কনফাইনমেন্ট) অমানবিক বলেছিল। নতুন ফৌজদারি আইন তাকে সমর্থন করেছে। সন্ত্রাসের মোকাবিলায় টাডা, পোটা, প্রভৃতি আইন বাতিল হলেও, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের জন্য নতুন ধারা যোগ করে পুলিশকে পূর্বের বেশ কিছু ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে বহু অস্বচ্ছতা। ফৌজদারি আইনের মতো অতি গুরুতর আইন, যা ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার, এমনকি জীবনের অধিকারকেও নিয়ন্ত্রণ করে, তার ধারায় শিথিলতা ও ধোঁয়াশা বহু মানুষকে বিপন্ন করবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement