Cleanliness

শুচিতার পরীক্ষা

গত বছর একটি বেসরকারি সমীক্ষায় বাহান্ন শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, ‘স্বচ্ছ ভারত’ (২০১৪) চালু হওয়ার পরেও ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগারের সংখ্যা বাড়েনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কাকে বলে স‌ংস্কৃতি? সংস্কৃতির বড়াই করতে বাঙালির জুড়ি নেই, অথচ শৌচাগার ভেঙেচুরে, নোংরা করে, ব্যবহারের অযোগ্য করে তোলার অপসংস্কৃতি তার মজ্জাগত। তার সাক্ষ্য দিচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সদ্য-নির্মিত শৌচাগারগুলি। হাওড়া স্টেশনে মেট্রো গ্রিন লাইনের জন্য নতুন শৌচাগারগুলি যথেষ্ট খরচ ও যত্নেই নির্মিত হয়েছিল। সংবাদে প্রকাশ, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার কল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভেঙে গিয়েছে, মেঝে অপরিষ্কার, তীব্র দুর্গন্ধ— হাওড়া স্টেশনের পুরনো শৌচাগারের সঙ্গে নতুনগুলির কোনও তফাত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এসপ্ল্যানেড, মহাকরণ, হাওড়া ময়দান স্টেশনগুলিতেও শৌচাগারের একই অবস্থা। এই পরিস্থিতি এক বৃহত্তর, দীর্ঘকালীন সমস্যার নবতম সংস্করণ। শৌচাগার বস্তুটি নিয়ে বাঙালি তথা ভারতীয়দের মনের কলুষ আর ঘুচল না। মাত্র এক-দুই প্রজন্ম আগে পর্যন্ত শহুরে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যৌথপরিবারের শৌচাগারটি ছিল সব থেকে অবহেলিত। বৈঠকখানার সাজসজ্জা গৃহস্থের যে পরিচয় জাহির করত, অপরিচ্ছন্ন, শ্রীহীন শৌচাগার দিত তার বিপরীত সাক্ষ্য। সেই পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে, গৃহসজ্জার বিপণনে বাহারি শৌচাগারও গৃহস্থের রুচিবোধ ও সম্পদের সূচক হয়ে উঠেছে বলে। সরকারি তরফে স্বচ্ছ শৌচাগারকে ‘পরিবারের মর্যাদা’ বলে নিরন্তর প্রচারের প্রভাবও কিছুটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সর্বজনের ব্যবহারযোগ্য শৌচাগারগুলির দুর্ভাগ্য ঘোচেনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি দফতরের এক-একটি অলিন্দে প্রবেশ করলেই স্বাগত জানায় দুর্গন্ধ। বিমানবন্দর কিংবা বিমানের ভিতরের শৌচাগারগুলিও প্রায়ই থাকে ব্যবহারের অযোগ্য। যা ইঙ্গিত দেয় যে, শৌচাগার পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা এ দেশের উচ্চশিক্ষিত, সম্পন্নদের মধ্যেও দুর্লভ।

Advertisement

এই যে শিক্ষা— যাকে সহবতের শিক্ষা বলা যায়— অবশ্যই তা কেবল স্কুল-কলেজের পাঠদানে মেলে না। পরিবার, প্রতিবেশী, বৃহত্তর সমাজের আচরণ তার প্রতিটি সদস্যের মধ্যে জনসম্পদের যথাযথ ব্যবহার, এবং অপরাপর নাগরিকের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে দেয়। উচ্চাঙ্গ সাহিত্য বা নাটক-সঙ্গীতের সমঝদারির চাইতেও, দৈনন্দিন আচরণে এই ধরনের সৌজন্য প্রদর্শনের অভ্যাসই একটি জাতির সংস্কৃতির প্রধান লক্ষণ। গণশৌচালয়কে পূতিগন্ধময় করে যিনি বিবেকের দংশন অনুভব করেন না, শহরের রাস্তাকে শৌচাগারের মতো ব্যবহার করায়, যত্রতত্র থুতু কিংবা পানের পিক ফেলায় কোনও অন্যায় দেখেন না, তাঁদের শিক্ষা “ষোলো আনাই ফাঁকি।” এই অশিক্ষা থেকেই জনবহুল এলাকাগুলিতে যথেষ্ট শৌচাগারের অভাবকেও একটা সমস্যা বলে মনে হয় না। অথচ মহিলা, বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষরা শৌচাগারের অভাবে বিপন্ন হন।

গত বছর একটি বেসরকারি সমীক্ষায় বাহান্ন শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, ‘স্বচ্ছ ভারত’ (২০১৪) চালু হওয়ার পরেও ব্যবহারযোগ্য গণশৌচাগারের সংখ্যা বাড়েনি। প্রায়ই দেখা যায়, গণশৌচাগার নির্মাণের পরে সেগুলিতে জলের জোগান, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, সারাই, প্রভৃতির ব্যবস্থা করেন না নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ। জলে লোহার আতিশয্যের জন্য জলের পাইপ বন্ধ হচ্ছে, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে। এই সব গাফিলতি প্রশাসনিক অপসংস্কৃতির পরিচয়, যা কদর্য নাগরিক-সংস্কৃতির উল্টো পিঠ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement