dog attack

ভালবাসার বিপদ

কুকুরদের মধ্যে যে-হেতু স্বতঃপ্রণোদিত পরিবার পরিকল্পনার চল নেই, অতএব সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটি স্থানীয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩২
Share:

অনেক ক্ষেত্রেই প্রবল উত্ত্যক্ত করার পর কুকুর পাল্টা আক্রমণ করে। ফাইল চিত্র।

মানুষের আদিমতম বন্ধু হল কুকুর। তবে, সম্পর্কটি যে সব সময়েই বন্ধুত্বপূর্ণ, এমন দাবি করা মুশকিল। গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর এসেছে পথকুকুরের আক্রমণে মৃত্যুর, বা গুরুতর জখম হওয়ার। এটা ঘটনা যে, অনেক ক্ষেত্রেই প্রবল উত্ত্যক্ত করার পর কুকুর পাল্টা আক্রমণ করে। অবোধ প্রাণীকে দোষ দেওয়ার নয়, তারা স্বভাবধর্ম পালন করে মাত্র। কিন্তু প্রশ্ন করা প্রয়োজন, মনুষ্যবসতিতে নিয়ন্ত্রণহীন কুকুর থাকতে পারে কি? এই প্রশ্নটি উচ্চারিত হওয়ামাত্র প্রভূত প্রতিবাদ ভেসে আসে সারমেয়প্রেমীদের তরফ থেকে— তার অন্যতম বক্তব্য, তা হলে পথের কুকুরগুলি যাবে কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে থাকা জরুরি। প্রথমত, পথকুকুরদের জন্য শেল্টার বা নিরাপদ আশ্রয় থাকা প্রয়োজন, যেখানে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যাবে। দ্বিতীয়ত, কুকুরদের নির্বীজকরণের কর্মসূচির উপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন। হিসাব বলছে, ভারতে পথকুকুরের সংখ্যা ছয় থেকে আট কোটি। কুকুরদের মধ্যে যে-হেতু স্বতঃপ্রণোদিত পরিবার পরিকল্পনার চল নেই, অতএব সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটি স্থানীয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। তার জন্য বিপুল পরিকাঠামো, কর্মী এবং আর্থিক বল প্রয়োজন। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে যে স্থানীয় প্রশাসন ততখানি গুরুত্ব দেয় না, বাস্তব তার প্রমাণ দেয়। সমস্যাটিকে জনস্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা বিধেয়। গত পাঁচ বছরে রাস্তার কুকুরের কামড়ে ৩০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে— মৃতের তালিকায় দরিদ্র ও গ্রামীণ পরিবারের শিশুদের অনুপাত উদ্বেগজনক রকম বেশি। একই সময়কালে কুকুরের কামড়জনিত কারণে জলাতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনা ২০,০০০-এর বেশি। অতএব, সমস্যাটিকে তুচ্ছ করে দেখার কোনও কারণ নেই।

Advertisement

প্রশাসনিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পাশাপাশি রয়েছে নাগরিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতাও। শহরে হোক বা গ্রামে, ভারতের যে কোনও অঞ্চলেই কিছু ‘কুকুরপ্রেমী’র সন্ধান পাওয়া যাবে, যাঁদের ভালবাসার একমাত্র প্রকাশ কুকুরদের খাওয়ানো। দু’বেলার উচ্ছিষ্ট, অথবা সস্তার বিস্কুটের প্যাকেট কিনে রাস্তার কুকুরদের রাস্তাতেই খাইয়ে তাঁদের ভালবাসা ফুরিয়ে যায়। তাঁদের অধিকাংশই সেই কুকুরদের জন্য অন্য কোনও দায়িত্ব নিতে নারাজ। সমস্যা হল, কে ভালবাসতে চায় আর কে চায় না, কুকুরদের পক্ষে তা সব সময় বুঝে ওঠা কঠিন। ফলে, কুকুর দেখলে আতঙ্কে যাঁদের হৃৎকম্প ঘটে, কুকুররা তাঁদের কাছেও সেই ‘ভালবাসা’ই চায়। না পেলে মাঝেমধ্যে চড়াও হয়। রাস্তা যে কুকুরদের খাওয়ানোর জায়গা নয়, কথাটা কুকুরদের বোঝার নয়— মানুষকেই তা বুঝতে হবে। পথপশুদের প্রতি যাঁদের ভালবাসা আছে, তাঁদের অনুভূতিতে আঘাত করার প্রশ্নই নেই— কিন্তু, তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানের কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। কুকুরদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সেখানেই খেতে দেওয়া জরুরি। অসুস্থ কুকুরের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে সেই নিরাপদ আশ্রয়েই। পশুপ্রেমী নাগরিকরা এই পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি করতে পারেন; নাগরিক উদ্যোগেও তৈরি করতে পারেন এমন আশ্রয়। পশুদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু, সেই দায়িত্ব পালন না করে পাঁচ টাকার বিস্কুটের প্যাকেট কিনে ভালবাসা ফলানোর অভ্যাসটি পরিত্যাজ্য। অন্য নাগরিকদের বিপদ বাড়ানোর অধিকার তাঁদের নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement