Curriculum and Credit Framework

ঘাটতি

নতুন চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হলে কলেজগুলিতে নাভিশ্বাস উঠবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সরকার এই কথাগুলি ভেবে দেখেছে কি?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০০
Share:

তিন বছরের পাঠ্যক্রমকে চার বছরের পাঠে পরিণত করতে হলে পাঠ্যক্রমেও আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রতীকী ছবি।

নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে স্নাতক স্তরে ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ চালু করার উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক থাকলেও আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই সেই ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই ব্যবস্থায় স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম চার বছরের। স্বভাবতই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রশ্নের একটি দিক নীতিগত— যেখানে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি সম্বন্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিস্তর প্রশ্ন তুলেছিল, সেখানে কার্যত বিনা আলোচনায় এই ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত হল কেন? রয়েছে ব্যবহারিক প্রশ্নও— পশ্চিমবঙ্গের কলেজ পরিকাঠামো কি চার বছরের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু করার জন্য তৈরি? পাঠ্যক্রমের মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় চার বছর হওয়ার অর্থ, কলেজে ক্লাসের সংখ্যা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে সেই অনুপাতেই, অর্থাৎ বর্তমান স্তরের চেয়ে তা ৩৩ শতাংশ বেশি হবে। ফলে, সব ক্লাস যদি করাতে হয়, তবে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও সেই অনুপাতেই বেশি হওয়া প্রয়োজন, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংখ্যাও। কলেজে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি থেকে শৌচাগার, সবের ক্ষমতাই এই অনুপাতে বেশি থাকা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে সেই বাহ্যিক ও মানব পরিকাঠামো বাড়ানো সম্ভব কি না, কেউ সেই প্রশ্ন করতে পারেন— অতীত অভিজ্ঞতা যদি মাপকাঠি হয়ে, তবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ বিষয়ে আশাবাদী না হওয়াই ভাল— কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হলে এই মুহূর্তেই এই বর্ধিত পরিকাঠামো প্রয়োজন। রাজ্যের কার্যত কোনও কলেজেই সেই পরিকাঠামো নেই। ফলে, নতুন চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হলে কলেজগুলিতে নাভিশ্বাস উঠবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সরকার এই কথাগুলি ভেবে দেখেছে কি?

Advertisement

তিন বছরের পাঠ্যক্রমকে চার বছরের পাঠে পরিণত করতে হলে পাঠ্যক্রমেও আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। কলেজে নতুন শিক্ষাবর্ষের আগে সুষ্ঠু ভাবে কার্যকর করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে। বহু কলেজে শিক্ষক পদ খালি। বহু প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করাতে হয়। এমনিতেই উপযুক্ত গবেষণাগারের অভাবে বিজ্ঞান পড়ানো বন্ধ হয়েছে বহু জায়গায়। নেই ভাল মানের গ্রন্থাগারও। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না, যাতে তারা উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে এক দিকে কর্মসংস্থান বা উপার্জনের যোগসূত্র ক্ষীণ হচ্ছে, আর অন্য দিকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বও হ্রাসমান— দুইয়ে মিলে গোটা দেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ ক্রমে শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্ব খোয়ালেও দীর্ঘ দিন অবধি উচ্চশিক্ষায় এই রাজ্য অগ্রগণ্য ছিল। এ শুধু অতীত গৌরব নয়, শিক্ষা পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে— পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে সর্বভারতীয় শিক্ষা হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। কিন্তু, তার জন্য বিবেচনা, বিচক্ষণতা প্রয়োজন। এক দিকে যেমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে মানোন্নয়নে উৎসাহ দিতে হবে, অন্য দিকে তেমনই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও করে তুলতে হবে দক্ষ, লেখাপড়ার অনুকূল। হঠকারিতা নয়, পদক্ষেপ করতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement