Jyotipriya Mallick

লাল-কালো অক্ষরে

বিধিভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র এ বছরও দিল না আবাস যোজনার বরাদ্দ, আটকে দিল প্রাথমিক চিকিৎসার কেন্দ্রের টাকাও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪২
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

বছর বদলায়, দিন বদলায় না, এমন দীর্ঘশ্বাস নিয়েই পশ্চিমবঙ্গে ফুরোল ২০২৩। রাজ্যের সম্বৎসরের ধারাভাষ্য লিখতে গেলে কলম ডোবাতে হয় দুর্নীতির আলকাতরায়। গত বছর শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে নেমে এ বছর মার্চ মাসে পুরসভায় চাকরি বিক্রির সন্ধান পেল কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা। বছরের শেষে শোরগোল পড়ল রেশন কেলেঙ্কারি নিয়ে। রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে-দফতরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি আর সিবিআই-এর অভিযান প্রায় রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ়ের আকারে সংবাদে এল বারো মাস জুড়ে। গত বছর জুলাইয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হতে আলোড়ন পড়েছিল। এ বছর অক্টোবরে রেশন-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দি হলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে তদন্তের গতি বড়ই ঢিমে— স্কুলে নিয়োগ মামলায় অভিযুক্তকে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করতে এত দেরি হচ্ছে কেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সে প্রশ্ন করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের দুই মাননীয় বিচারপতি: প্রথমে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, পরে বিচারপতি অমৃতা সিংহ। শেষে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত এবং বিচারের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিল নভেম্বরে। গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে একটা সূত্র টানলে যে ভাবে আর একটা দুর্নীতি সামনে আসছে, তাতে দুর্নীতির সুবিস্তৃত, দলীয় ক্ষমতা-পোষিত জালটি আরও স্পষ্ট হয়েছে এ বছর। নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারিতে বিরোধীদের আস্ফালন বাড়ল, তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার নকশায় তার প্রতিফলন মিলল না। জুলাইয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব ক’টি জেলা পরিষদ তৃণমূল জিতল, আশি শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতও দখল করল।

Advertisement

এ বারও নির্বাচনের ফলে পড়ল রক্তের পোঁচ— অন্তত পঞ্চান্ন জন প্রাণ হারিয়েছেন নির্বাচনী সংঘাতে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ভাঙড়ে কাঁঠালিয়া ও বিজয়গঞ্জ বাজারে আইএসএফ-তৃণমূল সংঘর্ষে পাঁচশোরও বেশি বোমা পড়ে, পশ্চিমবঙ্গের নিরিখেও এই মাত্রা চমকপ্রদ। প্রসঙ্গত, এই বছরই ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ছিল, হতাহতের কোনও খবর আসেনি কোনও রাজ্য থেকে। রাজনীতি হিংস্রতার এই সংস্কৃতি কত দূর বিস্তৃত, তা দেখাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে নদিয়ার কিশোরের অপমৃত্যু। পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতার চর্চা হস্টেলে বহু বছর চলছে, তার সাক্ষ্য মিলল। আরও দেখা গেল, সিনিয়র ছাত্রদের র‌্যাগিং বন্ধ করার আইনি ব্যবস্থাগুলি কিছুই কাজ করে না। নিয়ম নস্যাৎ করার এমন অভ্যাস সর্বত্র, তবু কিছু দৃশ্য গেঁথে যায় রাজ্যবাসীর মস্তিষ্কে। যেমন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাঁচ মাসের মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে নিয়ে চলেছেন পরিযায়ী শ্রমিক বাবা, কারণ অ্যাম্বুল্যান্সের আট হাজার টাকার দাবি মেটানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। বিনা পয়সায় শববাহী গাড়ি পাওয়ার কথা, মেলেনি। আইন আছে পরিযায়ী শ্রমিকের সুরক্ষারও। তবু মিজ়োরামে রেলব্রিজ দুর্ঘটনার জেরে মালদহে ফিরল চব্বিশটি কফিনবন্দি দেহ। দুর্নীতি আর অবহেলা: একই সঙ্কটের দু’টি পিঠ।

সেই সঙ্কটের আর একটি মাত্রা— কর্মহীনতা। একশো দিনের কাজের প্রকল্প এ বছরও বন্ধ রইল, অনিয়মের দায়ে কেন্দ্র টাকা দিতে নারাজ। বকেয়া মজুরি আদায় করতে তৃণমূল আন্দোলন শুরু করেছিল, তবে সেই কার্যসূচি অসমাপ্ত, ফল তেমন কিছু হয়নি, বেড়েছে ভিন্‌রাজ্যে যাত্রা। বিধিভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র এ বছরও দিল না আবাস যোজনার বরাদ্দ, আটকে দিল প্রাথমিক চিকিৎসার কেন্দ্রের টাকাও। রাজনীতির মঞ্চে শোনা গেল কেবল প্রচার আর কোন্দল— বিরোধী দলই শুধু নয়, রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ছোট-বড় সংঘাতও চলেছে বছরভর। বাংলার পথ কিন্তু আন্দোলিত হয়েছে জীবিকার দাবিতে। ৯ ডিসেম্বর হাজার দিনে পড়ল শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আন্দোলন। চটকল আর চা-বাগান খোলার দাবিতে ধর্না দিয়েছেন মজুররা। নাকের বদলে নরুন: বছরশেষে মিলেছে কেবল বাড়তি তিন দিন ছুটি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement