Corruption

ধ্বংসের মুখোমুখি

দুর্নীতির পরিমাণ এ ক্ষেত্রে এতই বড় যে, বিচারবিভাগের রায়ের অভিঘাতে নির্মাতাদেরই কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের নির্মাণকে ধ্বংস করতে হল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:০৫
Share:

রাষ্ট্রের পরতে পরতে অন্যায় ও দুর্নৈতিকতার প্রচণ্ডতা।

দীপের আলো নেবার আগে যেন সামান্য ধাক্কাও লাগে না, কখনও এতই সহজে আসে সমাপন। টি এস এলিয়ট তো বলেই গিয়েছেন, পৃথিবীর বড় পরিবর্তনগুলি ঘটে যায় ‘নট উইথ আ ব্যাং বাট আ হুইম্পার’। তবে কিনা, ভেবে দেখলে, এটাই সমগ্র সত্য নয়, ব্যতিক্রমও আছে, জোরালো ব্যতিক্রম। কিছু কিছু নির্বাপণ বা অবসানকে সত্যিই বিরাট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসতে হয়। গত সপ্তাহে নয়ডার দু’টি টাওয়ার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে, ভারতে এখন দুর্নীতিদানবের যে তুমুল আস্ফালন, তাকে থামানোর জন্য এমন একটা কিছুই চাই। দু’টি উচ্চশির বাড়ি নিজেদের ভিতরেই ধসে পড়ল, তার মধ্যে‌ই যেন প্রতীকায়িত হয়ে থাকল পঁচাত্তর বছর বয়সি রাষ্ট্রের পরতে পরতে অন্যায় ও দুর্নৈতিকতার প্রচণ্ডতা। নাগরিকের কাছে দুর্বহ সেই পরিহাস, তাই এমন এক ঘটনার সামনে তারা সকলে করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। কী যে ভেঙে পড়ছে, তার সম্যক বোধের অভাবেই হয়তো এই শিশুসুলভ উৎফুল্লতা।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে বাড়ি ভেঙে ফেলতে হল, তার নির্মাণের বিপুল ব্যয় ও শ্রমের কথা যদি সাধারণ্যের অবগত না-ও থাকে, নয়ডা প্রশাসনের সঙ্গে নির্মাণব্যবসায়ীদের গোপন যোগসাজশের সংবাদ প্রকাশ্য হলেও কি এই উৎফুল্লতা ঘুচবার কথা নয়? দুর্নীতির পরিমাণ এ ক্ষেত্রে এতই বড় যে, বিচারবিভাগের রায়ের অভিঘাতে নির্মাতাদেরই কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের নির্মাণকে ধ্বংস করতে হল। আর এই ধ্বংসের ফলে ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়াল পাঁচশো কোটি। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে পৌঁছে এই বিধ্বংসী রায়ে গত বছর পৌঁছতে লেগেছে আট বছর। অকুস্থলে এক আইনজীবীর মন্তব্যটিই দেওয়ালে লিখন হয়ে গেঁথে থাকার মতো: দুর্নীতিচক্রকে ভাঙতে তা হলে বিস্ফোরকের এত শক্তিই লাগে বটে! যে শক্তির পরিমাণ নাকি ১২টি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের সমান। এবং সৎকার কার্যের সময়টিও বড় কম নয়। আশি হাজার টন ধ্বংসাবশেষ সরানোর প্রক্রিয়াটি চলবে তিন মাস ধরে। পরিবেশের উপর এই ধ্বংসলীলা যে প্রভাব ফেলল, সেই ক্ষতির মাত্রা ঠিক কতখানি, তা বুঝতে সম্ভবত আরও বেশি সময় লাগবে।

প্রশ্ন হল, এই প্রবল বিস্ফোরণেও কি দেশের দুর্নীতির চক্রটি ভাঙবে, না কি অভিঘাত সীমিত থাকবে এই জোড়া-টাওয়ারের পরিসরটুকুতেই? কিছু দিন লোকের মুখে মুখে কথাটি ঘুরবে, তার পর জনস্মৃতি থেকেও মুছে যাবে এই বিস্ফোরণ? প্রশ্নটি অনিবার্য, কারণ এই জোড়া-টাওয়ারের দুর্নীতিকে ধসিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রয়োজন হয়েছিল। আশঙ্কা হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই যত ক্ষণ না শীর্ষ আদালত বাধ্য করছে, তত ক্ষণ রাজনীতি ও সাঙাততন্ত্রের বিষচক্র চলতেই থাকবে। আশঙ্কাটি ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নয়, কিন্তু বাস্তব। বিষচক্রটি চলতে পারে, কারণ বেশির ভাগ সময়েই সাধারণ মানুষ তাকে স্বাভাবিক ও ভবিতব্য বলেই ধরে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এই প্রবল বিস্ফোরণেও সেই স্বাভাবিকতার বোধটি কেঁপে উঠবে কি? সাঙাততন্ত্রের দুষ্টচক্রের সন্ধান মিললেই কি এতখানি প্রতিবাদ হবে, যাতে নেতারা নড়ে বসতে বাধ্য হন? এই প্রশ্নের উত্তরের উপর ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকখানি নির্ভরশীল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement