—প্রতীকী ছবি।
এ বার স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ না করার অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে স্পেশাল এডুকেটর পদে নিয়োগ না হওয়া নিয়ে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সম্প্রতি তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের জন্য রাজ্যের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই পদে নিয়োগের নির্দেশ দিল হাই কোর্ট। বলা হয়েছে, এই নিয়োগের বিষয়ে ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতের যে নির্দেশ রয়েছে, সেই অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে পদ তৈরি করতে হবে আগামী তিন মাসের মধ্যে। মামলার পরবর্তী শুনানিতে এই নির্দেশ পালন নিয়ে রিপোর্টও জমা দিতে বলা হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব এবং পর্ষদকে। শুধু তা-ই নয়, এই সংক্রান্ত শীর্ষ আদালতের অন্য নির্দেশগুলিও মানতে হবে।
অজানা নয় যে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এবং যে-হেতু বিদ্যালয় শিশুর জীবন গড়ার প্রথম ধাপ, তাই বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অন্য শিশুদের মতোই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও বিদ্যালয়ের পরিবেশে ভাল থাকে। ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইনও তাই এই শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে যুক্ত করার কথা বলেছে। এদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে এবং স্কুলগুলির পরিবেশ আরও শিক্ষাবান্ধব করে তুলতে স্পেশাল এডুকেটরদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ, প্রশিক্ষণের সুবিধা, পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার সাহায্যে এই শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব। অথচ, রাজ্য সরকার সেই প্রচেষ্টায় যথেষ্ট উদ্যোগী নয়। এমনিতেই নানা অজুহাতে এই শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে অধিক। অনেক ক্ষেত্রে স্কুল থেকেই অভিভাবকদের জোর করা হয় বিশেষ স্কুলে পাঠানোর জন্য। অনেক সময় অভিভাবকদের তরফেও স্কুলের সঙ্গে শিশুর একাত্মকরণ প্রক্রিয়াটিতে খামতি থেকে যায়। অথচ, তাদের সকলেরই বিশেষ স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যাদের সমস্যাগুলি মৃদু থেকে মাঝারি, তাদের সাধারণ স্কুলে পড়ার উপরেই বারংবার জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের সমাজ কৃতীদের গুণগান করতে, সংবর্ধনা দিতে যতটা উৎসাহী, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের শিক্ষার জন্য একটি সামগ্রিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে তার সিকি ভাগ আগ্রহও দেখা যায় না। অথচ, সমাজে বহু প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের উদাহরণ মেলে, যাঁরা সময়মতো সহযোগিতা পেয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এই সহযোগিতা কেন সকলের মিলবে না, সেই প্রশ্ন ওঠা উচিত নয় কি?
কোনও দেশ বা রাজ্যের অগ্রগতির পরিমাপটি বোঝা যায় সামগ্রিক ভাবে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য, এই রাজ্যে শিক্ষা বিষয়ে প্রশাসনিক মহলে সচেতনতা যথেষ্ট কম। শীর্ষ আদালতের প্রাথমিক স্তরে স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগের নির্দেশ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা তথা বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের করুণ চিত্রটিকে আরও এক বার প্রকট করল। প্রশাসনকে বুঝতে হবে, স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ না হওয়ার ফলে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত অসংখ্য শিশু শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাধারণ শিশুদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা। শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিভাজন কোনও সভ্য রাজ্যের চিত্র হতে পারে না। এই ফাঁক পূরণ করতে যে আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল, তা নিতান্তই লজ্জার।