WB assembly election 2021

গণতন্ত্রের দাবি

এই পরিস্থিতিতে আঠারো কোটি ভোটদাতার মতদানের আয়োজনকে কঠিন কাজ বলিলে কম বলা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

দেশের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভায় আট শতাধিক আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন শুরু হইতেছে আজ। মোট ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় আঠারো কোটি। পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়িয়া প্রায় এক মাসের কর্মকাণ্ডটি কার্যত একটি ছোটখাটো সাধারণ নির্বাচনের শামিল। ১৯৫২ সালের প্রথম নির্বাচন হইতে শুরু করিয়া আজ অবধি এই দেশে ভোটের ব্যবস্থাপনা বহু সমস্যার মধ্য দিয়া অগ্রসর হইয়াছে। এবং, নানা ত্রুটি, নানা বিচ্যুতি, নানা অভিযোগ সত্ত্বেও সামগ্রিক ভাবে গণতন্ত্র অনুশীলনের প্রক্রিয়া হিসাবে ভারতের নির্বাচন সঙ্গত কারণে বিশ্বের সমীহ আদায় করিয়া আসিয়াছে। তদুপরি এই বারের পরিস্থিতি আক্ষরিক অর্থে অস্বাভাবিক। বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হইয়াছে গত নভেম্বরে। অতিমারির কালে তাহার পরে এই পাঁচ রাজ্যে ভোট হইতেছে। ভাইরাসের দাপট এখনও চলিতেছে, বস্তুত নূতন করিয়া বাড়িতেছে। এই পরিস্থিতিতে আঠারো কোটি ভোটদাতার মতদানের আয়োজনকে কঠিন কাজ বলিলে কম বলা হয়।

Advertisement

রাজ্য বিধানসভার ভোটে রাজ্যের নিজস্ব পরিস্থিতিই প্রধান ভূমিকা লইবে, তাহা স্বাভাবিক। কিন্তু অংশত ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাটির এককেন্দ্রিক ঝোঁকের কারণে এবং অংশত একাধিক ‘জাতীয়’ দল কেন্দ্র ও রাজ্য দুই স্তরেই সক্রিয় থাকিবার ফলে লোকসভা নির্বাচনের সহিত বিধানসভা নির্বাচনের পারস্পরিক সম্পর্ক সর্বদাই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠে। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি তাহার আগ্রাসী ‘জাতীয়তাবাদ’কে আপন রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করিবার যে অভিযান চালাইয়া আসিতেছে, তাহা বিভিন্ন অঞ্চলের রাজ্য রাজনীতিতেও বড় রকমের প্রভাব ফেলিয়াছে। দক্ষিণ ভারতের যে দুই রাজ্যে ভোট হইতেছে, সেই কেরল ও তামিলনাড়ুতে এই প্রভাব এখনও তুলনায় কম। অসমের পরিস্থিতি অন্য। সেই রাজ্যের রাজনীতিতে নাগরিকত্ব এবং অনুপ্রবেশের জটিল সমস্যাটিকে কাজে লাগাইয়া বিজেপি সেখানে সাফল্য পাইয়াছে, ২০১৬ সালেই প্রথম সরকার গড়িয়াছে। তবে সেই সাফল্যের ভিতরেই সমস্যাও নিহিত ছিল। এই বারের নির্বাচনে সেই সমস্যার কী প্রভাব পড়িবে, তাহা কেবল অসমের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নহে, ভারতীয় রাজনীতির সামগ্রিক গতিপ্রকৃতির পক্ষেও প্রাসঙ্গিক।

তবে পুদুচেরি-সহ পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত হইতেছে পশ্চিমবঙ্গ। দশ বছর সরকার চালাইবার পরে তৃতীয় বার ক্ষমতার দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, গত লোকসভা নির্বাচনের অঙ্ক ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক তৎপরতার বিচারে তাঁহার প্রধান প্রতিস্পর্ধী ভারতীয় জনতা পার্টি, এবং নবগঠিত সংযুক্ত মোর্চা— ত্রিমুখী প্রতিযোগিতার নিজস্ব জটিলতার সহিত যুক্ত হইয়াছে নির্বাচনের পূর্ববর্তী কয়েক মাসে শাসক দল হইতে নানা মাপের নেতানেত্রীদের বিজেপিতে পাড়ি দিবার প্রবণতা, যে প্রবণতা এখনও অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার বহুলাংশে পারস্পরিক দোষারোপ, গালিগালাজ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণে ভারাক্রান্ত হইয়াছে। তাহার সঙ্গে আছে হিংসার উপদ্রব, যে রাজনৈতিক হিংসায় পশ্চিমবঙ্গ ইদানীং গোটা দেশের মধ্যে কার্যত অনন্য। যে সব দল তথা প্রার্থীরা ইহারই মধ্যে নিজেদের মতো করিয়া জনসাধারণের প্রকৃত সমস্যা এবং দাবিদাওয়া লইয়া কথা বলিতেছেন, তাঁহারা সুস্থ এবং আশাপ্রদ ব্যতিক্রম, তবে ব্যতিক্রমই। এই অবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের আশা আপাতত দুরাশামাত্র। নাগরিক কেবল এইটুকু আশা করিবেন যে, নির্বাচন হিংসায় কলুষিত হইবে না, ভোটদাতারা অবাধে আপন অধিকার প্রয়োগ করিতে পারিবেন, নির্বাচন কমিশন তথা প্রশাসন আপন দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করিবে। আপাতত ইহাই গণতন্ত্রের দাবি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement