BRICS

সংসার-বৃদ্ধি

দু’দশক আগে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল যখন ‘ব্রিক’ নামটি চালু করেন, তখন তিনি কি জানতেন যে এই নামটিই এক দিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশগুলির এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী জোট হয়ে দাঁড়াবে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪০
Share:

—ফাইল চিত্র।

এ বার তবে পাঁচ থেকে দশ-এ। নতুন বছরে সংসার দ্বিগুণ হল ব্রিকস-এর। মস্কোর প্রেসিডেন্ট-পদ কালে, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর এই বিশেষ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পূর্ণ সদস্যরূপে যোগ দিল ইথিয়োপিয়া, ইরান, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। গত বছর অগস্টে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের বার্ষিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর্জেন্টিনা এই মঞ্চে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও সে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই গত বৎসরান্তে এই দল থেকে নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিকসের সদস্যবৃদ্ধির সূত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পর্যন্ত বিশেষ উত্তেজিত। সদস্য দেশগুলির দাবি, সার্বভৌম সাম্য, ঐকমত্য, এক ন্যায্য বৈশ্বিক আর্থিক এবং বাণিজ্যিক ধারার মতো এই জোটের বহুবিধ নীতির কারণে আরও বহু দেশই এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী। রাশিয়ার নেতৃত্বকালে সদস্য দেশগুলির মধ্যে বৈদেশিক নীতির সমন্বয় বৃদ্ধি তো বটেই, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বে কোনও প্রকার সমস্যার ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে উপযুক্ত সমাধান অন্বেষণের উপরেও জোর দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ব্রাজ়িল, রাশিয়া, ভারত এবং চিনকে নিয়ে ২০০৯ সালে গড়ে ওঠা এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরের বছরেই যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

Advertisement

দু’দশক আগে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল যখন ‘ব্রিক’ নামটি চালু করেন, তখন তিনি কি জানতেন যে এই নামটিই এক দিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশগুলির এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী জোট হয়ে দাঁড়াবে? এ-যাবৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ এবং মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশের অংশীদার ছিল ব্রিকস। এ বার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইরান— বিশ্বের তিন বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি বৈশ্বিক মঞ্চে নিঃসন্দেহে ব্রিকস-এর গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর প্রভাব বিস্তারে এই জোটবৃদ্ধির ভূমিকাটির কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? তা ছাড়া, বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের বিকল্প হিসাবে ব্রিকস আরও শক্তপোক্ত করতে চায় তাদের নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-কে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের আধিপত্য এবং গুরুত্ব হ্রাস এবং আঞ্চলিক মুদ্রার সাহায্যে বিকল্প প্রক্রিয়া গড়ে তোলাও ব্রিকসের অন্যতম লক্ষ্য।

তবে সমস্যাও বহুবিধ। আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেনে ডলারের আধিপত্য খর্ব করা সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নতুন ব্রিকস-এর এমন কিছু রাষ্ট্র রয়েছে, যাদের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমস্যা জটিল ও বিচিত্র। সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত ইরান ও সৌদি আরব আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। গোষ্ঠীর ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ নয়। বিশ্ব অর্থনীতির চালক আমেরিকা-সহ জি৭-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ব্রিকস-কে গড়ে তুলতে আগ্রহী চিন এবং রাশিয়া, এও সর্বজনবিদিত। আগামী দিনে নতুন অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনও দেশের নিজের স্বার্থ যাতে প্রাধান্য না পায়, তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে। ভারত-সহ ব্রিকস-এর অন্য সদস্যদের যেখানে পশ্চিমের দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে নিজেদের স্বার্থেই কেউ সেই সম্পর্কের অবনতি চাইবে না। এই গোষ্ঠীর কার্যকারিতার চাবিকাঠিটি তাই ভারসাম্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement