Congress

আপাতত উত্তীর্ণ

একই রাজ্যে দুই প্রতিস্পর্ধী নেতার দ্বন্দ্বে কংগ্রেসের কপাল পুড়েছে বহু বার— ইতিহাসের পাতাতেও, বর্তমানের পরিসরেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৫:০০
Share:

যুদ্ধটি ছিল দলের অভ্যন্তরে— মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কে বসবেন, সিদ্দারামাইয়া, না কি ডি কে শিবকুমার? ফাইল ছবি।

কর্নাটকে কংগ্রেস আরও এক বার জয়ী, কেউ এমন দাবি করলে এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া মুশকিল। বিধানসভায় ১৩৫টি আসন দখল করা ছিল কংগ্রেসের বহিরঙ্গের যুদ্ধ। অন্য যুদ্ধটি ছিল দলের অভ্যন্তরে— মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কে বসবেন, সিদ্দারামাইয়া, না কি ডি কে শিবকুমার? একই রাজ্যে দুই প্রতিস্পর্ধী নেতার দ্বন্দ্বে কংগ্রেসের কপাল পুড়েছে বহু বার— ইতিহাসের পাতাতেও, বর্তমানের পরিসরেও। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বনাম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দ্বৈরথের ফয়সালা কংগ্রেসের পক্ষে যায়নি; আশঙ্কা হয়, রাজস্থানে অশোক গহলৌত বনাম সচিন পাইলটের দ্বন্দ্বও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে অনুকূল হবে না। অতএব প্রশ্ন ছিল, কর্নাটকে সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমারের মধ্যে দল ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে, না কি তৈরি হবে আর একটি অলঙ্ঘ্য বিভাজিকা? গত এক দশকে শিবকুমার ক্রমেই দশ জনপথের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন, কর্নাটকের কংগ্রেস রাজনীতি তাঁকে যে কোনও সঙ্কটের ত্রাতা হিসাবে চিনেছে। গত দফায় জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট সরকার ভাঙার পর, ২০২০ সালে দলের প্রদেশ সভাপতি হয়ে শিবকুমার সংগঠন মজবুত করার কাজে জোর দিয়েছিলেন— নির্বাচনে তার সুফলও মিলেছে। অন্য দিকে, সিদ্দারামাইয়া কর্নাটকের রাজনীতির এক মহীরুহ— পাঁচ দশকেরও বেশি সংসদীয় রাজনীতিতে আছেন অথচ বিশেষ কোনও কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায়নি তাঁর; নিজস্ব জাতিপরিচিতির বাইরেও বিপুল সমর্থকভিত্তি, কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য সংখ্যালঘুদের মধ্যেও জনপ্রিয়; এবং কংগ্রেসের বর্তমান সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর অবস্থানটি সমানুবর্তী। এই দুই নেতার মধ্যে সমঝোতাসূত্র বার করার কাজটি নেহাত সহজ ছিল না।

Advertisement

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রাক্‌-নির্বাচন পর্বে দুই নেতাই রাজনৈতিক পরিণতমনস্কতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কর্নাটক রাজনীতিতে এস এম কৃষ্ণের উত্তরাধিকারী হিসাবে পরিচিত শিবকুমারের সঙ্গে সিদ্দারামাইয়ার সম্পর্ক সুমধুর নয় বলেই অবহিত মহলের মত। বারে বারেই বিভিন্ন বিতর্কে নাম জড়িয়ে যাওয়া শিবকুমারের সঙ্গে সিদ্দারামাইয়া দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। ২০২০ সালে শিবকুমারের হাতে রাজ্য সংগঠনের ভার তুলে দেওয়াও সিদ্দারামাইয়াকে সন্তুষ্ট করেনি। কিন্তু, পারস্পরিক অপছন্দ দূরে সরিয়ে তাঁরা একত্রে নির্বাচনে লড়েছেন। ঘটনা হল, কংগ্রেসি সংস্কৃতিতে এই সহযোগিতার উদাহরণ খুব সুলভ নয়। নির্বাচন-পরবর্তী পর্যায়ে দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানান। শিবকুমারের দাবির ভিত্তি, তিনিই দলের সংগঠনকে এই যুদ্ধের উপযোগী করে তুলেছিলেন; অন্য দিকে, সিদ্দারামাইয়ার পক্ষে আছেন নির্বাচিত বিধায়কদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। কী ভাবে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দাবির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, কংগ্রেস হাই কম্যান্ডের কাছে তা বড় পরীক্ষা ছিল।

সম্ভবত সনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপেই শিবকুমার নিজের দাবি থেকে পিছু হটলেন। কিন্তু, লক্ষণীয় ভাবে, কর্নাটকের সমঝোতাসূত্র সন্ধানে দশ জনপথ বহুলাংশে নির্ভর করেছে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের উপর। এই ঘটনার তাৎপর্য শুধু কর্নাটকের বর্তমান নির্বাচনের পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়— এর মাধ্যমে সনিয়া-রাহুল সম্ভবত বার্তা দিলেন যে, দলের নির্বাচিত সভাপতি নেহাত রাবারস্ট্যাম্প নন, তিনি সত্যিই দলের শীর্ষ নেতা। এতে এক দিকে যেমন পরিবার-নির্ভরতা কমবে, অন্য দিকে দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রশ্নটিও গতিপ্রাপ্ত হবে। ব্ল্যাকমেলের পথে হেঁটে নিজের দাবি আদায় করার কু-অভ্যাসটি থেকে বেরোনোর একটা ইতিবাচক উদাহরণও অন্য প্রাদেশিক নেতাদের সামনে তৈরি হল। কর্নাটকের সমঝোতাসূত্রটি আদৌ টিকবে কি না, আড়াই বছরের মাথায় দরকার হলে সিদ্দারামাইয়া ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হবেন কি না, উত্তর এখনও অজ্ঞাত। কিন্তু, পরীক্ষায় আপাতত কংগ্রেস উত্তীর্ণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement