Kolkata

নিরাপদতম

শহর নিরাপদ— আপাতদৃষ্টিতে এই তথ্য নাগরিকের স্বাধীন চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন স্বস্তি আনে, ঠিক তেমনই প্রশাসনকেও আশ্বস্ত করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৭
Share:

২০২২ সালের জন্য দেশের প্রধান শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে শহর কলকাতা। —ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালের জন্য দেশের প্রধান শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে শহর কলকাতা। ২০২১ সালের জন্যও একই খেতাবপ্রাপ্তি ঘটেছিল মহানগরের। ২০২০ এবং ২০২১ সালের তুলনায় ভারতীয় দণ্ডবিধি মাফিক কলকাতায় অপরাধের সংখ্যা কমেছে। ২০২১ সালে যেখানে অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছিল তেরো হাজারের বেশি, এই বছর সেই সংখ্যা নেমেছে এগারো হাজারের কাছাকাছি। এই রিপোর্ট অনুযায়ী নথিবদ্ধ অপরাধের সংখ্যার বিচারে প্রথম স্থানটি দখলে যার, সেই দিল্লি কলকাতার তুলনায় এই বিষয়ে বহু গুণ এগিয়ে। এবং এটাও উল্লেখ্য যে, অপরাধের গড় হার, অর্থাৎ প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটিও কলকাতায় সর্বাপেক্ষা কম। জনসংখ্যার নিরিখে আমদাবাদ, পুণের মতো ছোট অনেক শহরে অপরাধের ‘সংখ্যা’ কম হলেও অপরাধের ‘হার’ কলকাতার তুলনায় বেশি।

Advertisement

এই পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক। শহর নিরাপদ— আপাতদৃষ্টিতে এই তথ্য নাগরিকের স্বাধীন চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন স্বস্তি আনে, ঠিক তেমনই প্রশাসনকেও আশ্বস্ত করে। কারণ, যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকা এবং নাগরিক নিরাপত্তা অর্থনীতির গতিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক মনে করা হয়। অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেলে উন্নয়নেও গতি আসে। কিন্তু, পরিসংখ্যান বস্তুটির বিপদ হল, তা যতখানি প্রকাশ করে, ধোঁয়াশাও সৃষ্টি করতে পারে ততটাই। এনসিআরবি-র এই পরিসংখ্যানের ভিত্তি হল থানায় দায়ের করা অভিযোগের খতিয়ান। অর্থাৎ, যে অপরাধের সংবাদ থানায় পৌঁছয়, এবং তা নথিভুক্ত হয়, সেই অপরাধের হিসাবই এই পরিসংখ্যানে ধরা রয়েছে। কথাটি শুধু কলকাতার ক্ষেত্রে নয়, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই সত্য। এখানে প্রশ্ন হল, যত অপরাধ ঘটে, তার কত শতাংশ থানা অবধি পৌঁছয়? যদি ধরা যায় যে, সে হার গোটা দেশের ক্ষেত্রেই অভিন্ন, তা হলে এই হার কত, তার উপরে কলকাতার ক্রমিক অবস্থানটি পাল্টাবে না। কিন্তু, প্রকৃত প্রস্তাবে শহর কতখানি নিরাপদ, সেই হিসাব পাল্টে যাবে। পরীক্ষায় একশোর মধ্যে নিরানব্বই পেয়ে প্রথম হওয়া, আর তেষট্টি পেয়ে প্রথম হওয়া তো এক কথা নয়। অতএব, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কলকাতা যে মহিলাদের সঙ্গে হওয়া অপরাধমূলক ঘটনার নিরিখে দেশে চতুর্থ স্থান দখল করে আছে, সেই বিষয়ে প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেখা প্রয়োজন, সাম্প্রতিক রিপোর্টে যে কলকাতায় একটিও ভ্রূণ বা শিশুহত্যার মতো ঘটনা নথিভুক্ত হয়নি বলে জানা যাচ্ছে, বাস্তব চিত্রটি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।

তবে, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ শহরের শিরোপা অর্জন নিশ্চিত ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শহর নিরাপত্তার তাৎপর্য অনস্বীকার্য। পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন বিলক্ষণ এই সাফল্যকে ব্যবহার করতে পারে। তবে এ কথাও ঠিক যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরে অপরাধপ্রবণতাও বাড়ে। দিল্লি বা মুম্বইয়ের মতো শহরের সঙ্গে কলকাতার তুলনা করার সময় এ কথাটি মনে রাখা জরুরি। সাফল্য উদ্‌যাপন করা ভাল, কিন্তু তা যেন অহেতুক আত্মতুষ্টির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement