Demolished By Bulldozer

দুরাচার

সব পথ রোমে পৌঁছনোর মতোই, বিজেপি-শাসনে সব কিছু কী করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষেই গিয়ে ঠেকে, আজকের ভারতে তা আর বিস্ময় জাগায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:২৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে রথ না ছুটুক, বিজেপির বুলডোজ়ার ঠিক ছুটছে— গত কয়েক বছর ধরেই। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর লোকমুখে নামই হয়ে উঠেছে ‘বুলডোজ়ার বাবা’, এখন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানও। দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে কিংবা স্রেফ সন্দেহেও বুলডোজ়ার এনে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁর বা তাঁর পরিবারের বাড়ি, স্থাবর সম্পত্তি। অভিযোগগুলি নানা ধরনের: হনুমান জয়ন্তী উদ্‌যাপনে দুই ধর্মের মানুষের ঝামেলা, কিংবা অভিযুক্ত সরকারি জমি দখল করে বাড়ি বানিয়েছেন এ-হেন যুক্তি। ভাড়াটের ছেলে অপরাধকর্মে যুক্ত, এই অভিযোগে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমনকি বাড়িওয়ালার বাড়িও। একে আর যা-ই হোক কোনও ভাবেই সমাপতন বলা যাচ্ছে না যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত মানুষটির পরিচয়— তিনি সংখ্যালঘু।

Advertisement

সব পথ রোমে পৌঁছনোর মতোই, বিজেপি-শাসনে সব কিছু কী করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষেই গিয়ে ঠেকে, আজকের ভারতে তা আর বিস্ময় জাগায় না। বরং জাগিয়ে তোলে আশঙ্কা, কারণ এ ক্ষেত্রে শাসক দলের নেতা কর্মী বা উগ্র সমর্থক-দল নয়, দমন-পীড়নের কাজটি হাতে তুলে নিয়েছে রাজ্যে রাজ্যে খোদ সরকার। বেশির ভাগ ঘটনাতেই দেখা গিয়েছে, আদালত বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নোটিস ছাড়াই, উপযুক্ত সময় বা যথেষ্ট পূর্বঘোষণা না দিয়ে বুলডোজ়ারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি। যে প্রশাসনের গোড়ার কাজ ‘আইনের শাসন’ নিশ্চিত করা, সে-ই যখন বুলডোজ়ার এনে সদর্পে আইন ভাঙে, তার চেয়ে আতঙ্কের আর কিছু হতে পারে কি? বুলডোজ়ার বা এক্সকেভেটরের প্রবল দৃশ্যমানতাকে তখন শাসকের ক্ষমতার নগ্ন প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু ভাবা চলে না। তখন নাগরিকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় বাস্তবচিত্র— এখানে অভিযুক্ত যে দোষে দোষী তার তদন্ত ও বিচার আইনি পথে হবে কি না তা পরের কথা; শুরুতেই বুলডোজ়ারে বাড়ি গুঁড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, সংখ্যাগুরুর ক্ষমতাতন্ত্রে সংখ্যালঘুকে জান-মান ও বাসস্থানও বাঁচাতে হলে আসলে কী ভাবে থাকতে হবে।

এই আতঙ্কের পরিস্থিতিতে একমাত্র ভরসা বিচারব্যবস্থা। সুপ্রিম কোর্ট গত দু’বছরে অনেকগুলি মামলার সূত্রে বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে সমানে বলে আসছে, এই বুলডোজ়ার-রাজনীতি চলতে পারে না। অতি সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ আবারও বলল, অভিযুক্তই হোক বা সন্দেহভাজন, তার অপরাধের দৃষ্টান্ত বা যোগসাজশ যা-ই পাওয়া যাক না কেন, তার বিচার হতে হবে আইনের শাসন অনুসারে, নির্বিচার বুলডোজ়ার তার ‘বিচার’ হতে পারে না। বিজেপি আমলে রাজ্যে রাজ্যে এই বেআইন এমনই এক স্বঘোষিত আইন হয়ে উঠছে যে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বভারতীয় নির্দেশিকা প্রণয়নের, যাতে কর্তৃপক্ষকে এ-হেন অন্যায় থেকে নিরস্ত করা যায়; এক দিকে মামলাকারী পক্ষ এবং অন্য দিকে কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান ও দিল্লি সরকারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে সম্ভাব্য নির্দেশিকা নিয়ে মতামত জানানোর। এই নির্দেশিকা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি, নয়তো এই শাসকের হাতে এনকাউন্টার বা বুলডোজ়ার দুই-ই হয়ে উঠবে নাগরিক দমনের অস্ত্র। ভারতের গণতন্ত্রের দুর্ভাগ্য, দুরাচার থেকে খোদ শাসককেই বিযুক্ত করতে এত সব ভাবতে ও করতে হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement