Death

মাতৃমৃত্যু

প্রসূতি-মৃত্যুর হার দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক তো বটেই, তা সার্বিক উন্নয়নেরও তাৎপর্যপূর্ণ মাপকাঠি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ০৭:০৬
Share:

লক্ষ্যপূরণের চেয়ে ঢের দূরে দাঁড়িয়ে ভারত। লক্ষ্য, প্রসূতি-মৃত্যুর হার বা এমএমআর রাষ্ট্রপুঞ্জ নির্ধারিত সূচকে নামিয়ে আনা। প্রতি এক লক্ষ প্রসবপিছু যত জন প্রসূতির মৃত্যু ঘটে থাকে গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন নানাবিধ জটিলতার কারণে, সেই অনুপাতকে বলে প্রসূতি-মৃত্যুর হার। এই হার কমানো একান্ত জরুরি। সেই উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-র অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার ধার্য করা হয়েছিল ৭০। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ভারতে এই মুহূর্তে এমএমআর ১১৩। ২০১৭-১৯ সালের মধ্যে ‘হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’-এ নথিভুক্ত করা প্রায় ৬ কোটি ২০ লক্ষ প্রসব এবং প্রায় ৬১ হাজার মাতৃমৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করে মিলেছে এই পরিসংখ্যান। ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ জেলাতেই এই হার রাষ্ট্রপুঞ্জ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। এবং সমগ্র বিশ্বে যত প্রসূতি মৃত্যু ঘটে, তার ১৫ শতাংশই ভারতে। এ ক্ষেত্রে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়, আগে শুধুমাত্র নাইজিরিয়া।

Advertisement

প্রসূতি-মৃত্যুর হার দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক তো বটেই, তা সার্বিক উন্নয়নেরও তাৎপর্যপূর্ণ মাপকাঠি। এই সূচকে খারাপ ফলের অর্থ, সামগ্রিক ভাবে দেশটিতে অপুষ্টি, নাবালিকা বিবাহ, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি সমস্যাগুলি বহাল তবিয়তে থেকে গিয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে পরবর্তী স্তরের এক দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান, যার কারণে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যথাযোগ্য চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। বিশেষত জেলা হাসপাতালের রেফার-রোগ অনেকাংশে প্রসূতি-মৃত্যুর জন্য দায়ী। আবার অনেক ক্ষেত্রে অ-নিরাপদ গর্ভপাতকেও এর জন্য দায়ী করা চলে। পঞ্জাবে যে হঠাৎ প্রসবকালীন মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগামী হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এই শেষোক্ত কারণটিই দায়ী বলে অনুমান। প্রসঙ্গত, দেশের প্রসূতিদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতিনির্ধারকরা এমএমআর-কেই মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে ভারতের মতো দেশের সত্তর শতাংশ জেলাই বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেকটাই পিছনে পড়ে আছে, এমন তথ্য উদ্বেগজনক বইকি।

তবে এমন নয় যে, ভারতে প্রতি বছর প্রসূতি-মৃত্যুর হার হ্রাস পাচ্ছে না। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও যে গতিতে প্রসূতি-মৃত্যু হ্রাস পাওয়া উচিত ছিল, ভারত সেই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। এসডিজি-নির্ধারিত বাৎসরিক প্রসবকালীন মৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫.৫ শতাংশ। ভারতে সেই হার ৪.৫ শতাংশেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, প্রসূতি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অবনমনের চিহ্নটি দীর্ঘ কাল ধরেই স্পষ্ট হচ্ছিল। নিঃসন্দেহে অতিমারির আগমন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে এবং প্রসবকালীন সমস্যা এড়াতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখেন আশাকর্মীরা। কিন্তু কোভিড-যুদ্ধে তাঁদেরও নিযুক্ত করায় প্রসূতি এবং শিশুস্বাস্থ্যের দিকটি সবিশেষ অবহেলিত হয়েছে। এর প্রভাবও আগামী দিনে প্রসবকালীন মৃত্যুর হারে পড়তে চলেছে। সুতরাং, এই অ-গৌরব থেকে ভারত দ্রুত মুক্তি পাবে, তেমন আশা ক্ষীণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement